কোচবিহারে হাতির হানায় মৃত্যু হল দু’জনের। গত বেশ কয়েক দিন ধরেই ছ’টি হাতির একটি দল এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বন দফতর এবং পুলিশ-প্রশাসন হাতির পালটিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা জারি রেখেছে। যদিও তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লোকালয়ে হাতির পালের দাপাদাপি চলছেই। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, কোচবিহার শহরের আশপাশে হাতি বসবাস করার মতো জঙ্গল অবশিষ্ট নেই। তা হলে হাতির পাল এল কোথা থেকে? বন দফতর এবং পুলিশ-প্রশাসন এখনও পর্যন্ত হাতির হানায় দু’জনের মৃত্যুর কথা জানালেও স্থানীয় সূত্রে দাবি, হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছে মোট চার জনের। মৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা। এক বনকর্মীও গুরুতর আহত হয়েছেন হলে জানা যাচ্ছে। হাতির হানায় মৃত্যু হলে বন দফতরের তরফে মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা করার রীতি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনহাটায় তাণ্ডব চালানোর পর হাতির পালটি শুক্রবার ভোর থেকেই দাপাদাপি শুরু করে মাথাভাঙা ২ ব্লকে। সূত্রের খবর, মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের পাড়াডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাউওরিকাটা এলাকায় হাতির হামলায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। মৃত ব্যক্তির নাম বুদেশ্বর অধিকারী। বয়স ৬৫ বছর। জানা গিয়েছে, বুদেশ্বর সে সময় মাঠে ঘাস কাটছিলেন। সেই সময় তিনি হাতির পালের মুখোমুখি পড়ে যান। আর বাঁচতে পারেননি। হাতি শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। সকাল থেকেই শীতলখুচি ও মাথাভাঙার বিস্তীর্ণ এলাকায় হাফ ডজন হাতি দাপিয়ে বেড়ায়। এডিএফও বিজন নাথ বলেন, ‘‘মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের পাড়াডুবি এলাকায় বুদেশ্বর অধিকারী নামে এক ব্যক্তির হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে। আমরা হাতিগুলিকে পুনরায় জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে মাথাভাঙ্গার ১২ মাইল এলাকায় হাতির দলটি বিচরণ করছে বলে জানতে পেরেছি।’’
এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই খবর আসে, মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকেরই ভানুরকুঠিতে আবার হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভানুরকুঠি এলাকায় ধানখেতে ঘাস কাটার সময়ে হাতির পালের আক্রমণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনন্দ প্রামাণিক নামের এক গ্রামবাসীর। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ঘোকসাডাঙ্গা থানার পুলিশ ও মাথাভাঙা বন দফতরের কর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতির পালের সামনে পড়ে মৃত্যু হয়েছে উনিশবিশা এলাকার দুই মহিলার। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন, ৬৮ বছরের রেখারানি রায়। তিনি উনিশবিশার ঘোকসাডাঙা হাইরোডের বাসিন্দা। অপর মৃতার নাম জয়ন্তী সরকার। ৪৬ বছর বয়সি জয়ন্তী উনিশবিশার বণিকপাড়ায় থাকতেন। স্থানীয়দের দাবি, হাতির পালের হামলায় এ নিয়ে মোট চার জনের মৃত্যু হল। যদিও বন দফতর বা পুলিশ-প্রশাসন— কেউই এখনও অন্য দুই মহিলার মৃত্যুর খবরের আনুষ্ঠানিক সত্যতা স্বীকার করেনি।
হাতির পালকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু গত ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার হুলা পার্টি কাজ করে গেলেও লাভ হয়নি। হাতির হানায় মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি হাতির পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষিজীবীরা। সমস্যা তৈরি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও। কারণ, হাতি দেখতে দলে দলে মানুষ ভিড় করছেন। সব মিলিয়ে ছ’টি হাতির দলকে জঙ্গলমুখো করতে কালঘাম ছুটছে বন দফতরের।