দিলীপ কুমার বিশ্বাসের প্রতিবেদন,২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫; খড়দহ। ২৫ শে ডিসেম্বর দেশ জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘তুলসীপূজন দিবস’। তুলসী বন্দনার অন্যতম কারণ, গাছটির অসামান্য ভেষজ গুণ। সনাতনী সংস্কৃতিতে তুলসীর অতি-সামীপ্যও এর আর একটি কারণ। অনুষ্ঠিতব্য তুলসীপূজনের প্রেক্ষিতে কয়েকমাস পূর্ব থেকেই তুলসী বিষয়ক ধারাবাহিকভাবে নানান কার্যক্রমের আয়োজন করে চলেছে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ ও ‘দেশের মাটি মাতৃ মিলন মন্দির’। ২৬ শে অক্টোবর ছিল এমনই মাহাত্ম্য ও পূজন বিষয়ক মহতী আলোচনা সভা। সুখচর কাঠিয়া বাবার আশ্রমে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা; নিবেদিত হয় বৈদান্তিক দ্বৈতাদ্বৈতবাদী যোগসাধক তথা বাঙালি দার্শনিক ও নিম্বার্ক-বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের গুরু পরম্পরায় ৫৬ তম আচার্য স্বামী ধনঞ্জয় দাস বাবাজীর স্মরণ-মননের মাধ্যমে। এদিন উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতৃমণ্ডলীর মধ্যে বিতরণ করা হয় তুলসীর চারা।
এই অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী ড. কল্যাণ চক্রবর্তীর। ছিলেন প্রাণীপালন বিজ্ঞানী ড. রাসবিহারী ভড়, মহিষাদল গার্লস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. উৎপল উত্থাসনী, কাঠিয়া বাবা আশ্রমের ট্রাস্টি সন্দীপ ঘোষ, আশ্রম সদস্য বিশ্বনাথ শেঠ, কাঠিয়া বাবা ভোকেশনাল কলেজের অধ্যাপক সুবল চন্দ্র ঘোষ, সমাজসেবী অরিন্দম ঘোষ, দেশের মাটি কল্যাণ মন্দিরের সম্পাদক মিলন খামারিয়া, দেশের মাটি মাতৃ মিলন মন্দির-এর সদস্যা সুমনা মুখার্জি, প্রমিতি রায়, কোয়েল ঘোষ, সুতপা ভড় প্রমুখ। এদিন আশ্রমে ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘তুলসীকথা’ বইটি প্রদর্শিত হয়৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়েকটি বই বিক্রির অর্থরাশিতে দেশের মাটি নানান সেবাকাজ পরিচালনা করে চলেছে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন মিলন খামারিয়া। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রমিতি রায়।

সুখচর কাঠিয়া বাবার এই আশ্রমটি গঙ্গার পূর্বতীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থান করছে। মন্দিরে রয়েছে রাধাবৃন্দাবনবিহারীর মূর্তি। গুরু-গোবিন্দ-গঙ্গা-গায়ত্রী-গোমাতা; এই পঞ্চ ‘গ’-এর সঙ্গমস্থল এই আশ্রম। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্বামী ধনঞ্জয়দাস কাঠিয়া বাবাজী। তাঁরই পুণ্য জন্মতিথিতে সুখচর আশ্রমে ছিল আজ উৎসব। আশ্রমের মহন্ত স্বামী বৃন্দাবনবিহারী দাস বাবাজীর অনুমতিক্রমে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির ও দেশের মাটি মাতৃ মিলন মন্দির-এর পক্ষ থেকে ‘তুলসীপূজন ও তুলসী মাহাত্ম্য বিষয়ক আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
কল্যাণ মন্দিরের সম্পাদক মিলন খামারিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ বছর মৌসুমি বর্ষার সূত্রপাত থেকেই দেশের মাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ছোটো ছোটো সভাস্থলে বার্তা দিয়েছেন, তুলসীতলায় অঙ্কুরিত বীজভাণ্ডার যে অসংখ্য চারার জন্ম দেয়, তা তুলে ফেলে নষ্ট না করে, যত্ন নিয়ে ছোটো পলিপ্যাকেটে স্থানান্তরিত করে প্রতিবেশী, স্বজন-বান্ধব এবং নানান সনাতনী হিতবাদী সংগঠনগুলির হাতে যেন তুলে দেয় হিন্দুরা এবং এভাবেই তুলসীর প্রচার ও প্রসার করেন। যত আগ্রহী মানুষের কাছে তুলসীর চারা পৌঁছে দেওয়া যাবে, ততই তুলসীপূজন অনুষ্ঠান সাফল্যলাভ করবে।
দেশের মাটি কল্যাণ মন্দিরের মুখ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তুলসীপূজন কেবল একদিনের অনুষ্ঠান নয়। বছরভিত্তিক তুলসীর ক্রমবর্ধমান চারার যোগান, তুলসীর গুণাবলী সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্প্রসারণে সারাবছর ধরেই সচেতনতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে দেশের মাটি গোষ্ঠী। বর্ষাকালই চারা তৈরির আদর্শ সময়। বর্ষায় তুলসী চারা বিনষ্ট না করে আঞ্চলিকভাবে বিতরণের চেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের সদস্যমহল। যত সময় যাবে, ততই মানুষ সচেতন হবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তুলসী মাহাত্ম্য প্রচার করবে। অধ্যাপক চক্রবর্তী আরও বলেন প্রতিটি হিন্দুকে গীতা এবং তুলসীর স্বয়ং-প্রচারক হতে হবে৷
সভা শেষে সবার হাতে তুলসীগাছের চারা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনায় ও তুলসী চারা যোগাড় করে দেন দিলীপ বিশ্বাস, বিধান সরকার ও মল্লিকা বিশ্বাস।


