রথের রশিতে টান দিয়ে কলকাতা ইসকনের রথযাত্রা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, রথের রশিতে টান দিয়ে প্রভু জগন্নাথকে তাঁর মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল না ভক্তদের। বরং এই প্রথম ক্রেন দিয়ে টেনে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে যাওয়া হল পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন ময়দান এলাকায় তৈরি মাসির বাড়িতে। রবিবার কলকাতার রথযাত্রায় এমনই ঘটনা ঘটল। যা দেখে ইসকন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য— সবই জগন্নাথের ইচ্ছে।
কলকাতায় ইসকনের রথ তার সুবর্ণ জয়ন্তী অতিক্রম করেছে কয়েক বছর আগেই। এ বার তাদের রথযাত্রার আয়োজনের ৫৩তম বর্ষপূর্তি ছিল। ৫২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি তাঁদের রথযাত্রায়, এমনটাই জানাচ্ছেন ইসকনের মুখপাত্রেরা। মুখ্যমন্ত্রী রথযাত্রার সূচনা করে যাওয়ার পরেই নামে জোর বৃষ্টি। কিছু ক্ষণের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয় রথযাত্রা। বৃষ্টি থামতেই, রথযাত্রার উদ্যোগ শুরু হলে ঘটে বিপত্তি। দেখা যায়, জগন্নাথের রথ নন্দীঘোষের স্টিয়ারিং ভেঙে গিয়েছে। অনেক চেষ্টার পরেও ভাঙা স্টিয়ারিং দিয়ে রথ চালানো সম্ভব না হলে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা শুরু হয়।
ইসকন কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের প্রচেষ্টায় আনা হয় ক্রেন। সেই ক্রেনে করেই হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে এক্সাইড মোড় হয়ে সবার আগেই জগন্নাথের রথ পৌঁছে যায় পার্ক স্ট্রিটের মাসির বাড়ির মেলা প্রাঙ্গণে। রথযাত্রার রীতি অনুযায়ী, বলরাম ও সুভদ্রা আগেই পৌঁছে যান মাসির বাড়ি। সবার শেষে পৌঁছন প্রভু জগন্নাথ। কিন্তু ইসকনের এ বারের রথযাত্রায় সেই রীতিতেও বদল এসেছে। বলরামের তালধ্বজ ও সুভদ্রার দর্পদলনের আগেই নন্দীঘোষ পৌঁছে যায় মাসির বাড়ি। এই রীতি বদল প্রসঙ্গে ইসকন কলকাতার অন্যতম কর্তা রাধারমণ দাস বলেন, ‘‘প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছেতেই সব কিছু হয় বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তাই এ বারের রথযাত্রা ক্রেন দিয়ে সম্পন্ন হওয়া থেকে শুরু করে, জগন্নাথের আগে মাসির বাড়ি পৌঁছনোর ঘটনাও তাঁর ইচ্ছে বলেই আমরা মেনে নিচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, আগে হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে শরৎ বোস রোড, হাজরা মোড়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রোড ও এক্সাইড মোড় হয়ে রথযাত্রা পার্ক স্ট্রিটের উদ্দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ক্রেন দিয়ে রথ নিয়ে যাওয়ার কারণে, সেই পরিকল্পনায় বদল আনা হয়। হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে এক্সাইড মোড় হয়ে রথযাত্রা পার্ক স্ট্রিটের অস্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ক’দিন মাসির বাড়িতেই থাকবেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। ১৬ জুলাই উল্টোরথ, ওই দিন পার্ক স্ট্রিট থেকে তিন দেবমূর্তি নিয়ে যাওয়া হবে ইসকনের মন্দিরে। তার আগে জগন্নাথের রথের স্টিয়ারিং ঠিক করা হবে বলেই ইসকনের তরফে জানানো হয়েছে।