যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি এই ঘটনার জন্য বাম ও তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করে সরব হয়েছে। তেমনি রাজ্য সরকার রাজ্যপালের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে। তবে এত কিছুর মধ্যে আজ নদিয়ায় ওই মৃত ছাত্রের পরিবারের সাথে দেখা করতে যান তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল। এই যাওয়াকেই কটাক্ষ করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর দাবি, তৃণমূল আসলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর পরই তার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আশ্বাস দিয়েছিলেন এই ঘটনায় জড়িতরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। এরপর নদিয়ায় বগুলাতে মৃত ছাত্রের মায়ের সঙ্গে দেখা করেন আজ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বাধীন এক প্রতিনিধি দল। তারা আশ্বাস দেন, গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হবে। অবশ্যই বিচার যাতে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবেন। আজ প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। একই সঙ্গে মৃত ছাত্রের ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার বিষয়টা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রতিনিধি দল।
আর এই বিষয়টিকেই তৃণমূলের ঘোলা জলে মাছ ধরতে যাওয়া বলে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, তৃণমূল বছরের পর বছর তো দেখেছে কি ধরনের ঘটনা ঘটেছে যাদবপুরে। ১২ বছর ধরে সরকার চলছিল। সরকার কি ঘুমাচ্ছিল? নাকি ১২ বছরে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু এই ছেলেটি মারা গেছে তাই বিষয়টি সামনে এসেছে। নাহলে প্রতিবছরই এই ঘটনা ঘটে। উলঙ্গ করে রেলিং এর উপর দিয়ে হাঁটানো হয় সেকথা ছাত্ররাই বলছে।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, যাদবপুরের ভেতরে একটা অন্য ধরনের পরিবেশ বেশ কয়েক বছর ধরে তৈরি করা হয়েছে। মূলত বাম ও অতি বামসংগঠনগুলি এটা করেছে। এরমধ্যে অনেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী। এরকম চিন্তাধারার মানুষের বার বারন্ত ওখানে হতে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের সময় সিপিএম হতে দিয়েছে, তৃণমূলের সময় তৃণমূল হতে দিয়েছে। এরা মূলত ভারত বিরোধী, ভারতের সংস্কৃতি বিরোধী চিন্তা ভাবনা নিয়ে কাজ করে গেছে। মিডিয়ার মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, অনেকে বলছে ওখানে ড্রাগসের কারবারও হয়। সুকান্ত বলেন, কিন্তু এত কিছুর পরও পড়ুয়ার মৃত্যু কখনই মেনে নেওয়া যেতে পারে না। তাঁর কথায় মত প্রকাশের অধিকার সকলের আছে। কিন্তু তা বলে কাউকে খুন করে দেওয়া যেতে পারে না। তাঁর দাবি, সরকারের উচিত করা পদক্ষেপ নেওয়া। কড়া পদক্ষেপ নিয়ে এটা বন্ধ হওয়া উচিত। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ভুল পদক্ষেপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বারবার নষ্ট হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার মধ্যরাতে হোস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে যান প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়া। নগ্ন-অচৈতন্য অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তারপর র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে এই ঘটনাকে ঘিরে। তদন্তে নেমে পুলিশ এক প্রাক্তনীকে প্রথমে গ্রেফতার করেছিল। এরপর আরো দুজনকে গ্রেফতার করে। বুধবার আরো ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এখনো পর্যন্ত মোট ৯ জন এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে।