নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের স্থায়ী সমিতির ভোটে সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর আসল ‘রূপ’ বেরিয়ে পড়ল! তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা দিব্যেন্দু নাকি ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে! এমনটাই জোরালভাবে দাবি করছে নন্দীগ্রামের তৃণমূল শিবির। আর তাতেই স্থায়ী সমিতি গঠনে জয় পেল বিজেপি।
যদিও দিব্যেন্দু (Dibyendu Adhikari) নিজে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন। কাকে ভোট দিয়েছেন সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের উত্তরেও দিব্যেন্দু খোলসা করেননি তাঁর অবস্থান। তিনি বলেন, “ভোটদানের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে আমার। সংবিধানপ্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী আমি ভোট দিয়েছি। কাকে ভোট দিয়েছি, না দিয়েছি তা পরিষ্কার, সবাই জানে।” তবে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল জানিয়েছেন,”এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দিব্যেন্দুবাবু বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।”
দিব্যেন্দুর অবস্থান যে দলের বিপক্ষে ছিল, সেটা অবশ্য স্পষ্টই জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ। তিনি বলছেন,”বর্ণচোরা দিব্যেন্দু। দিনে তৃণমূল,রাতে বিজেপি। এমন লুকোচুরি খেলা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অধিকারী পরিবারের রক্তে বিশ্বাসঘাতকতা রয়েছে। রাজ্যের মানুষের কাছে আজ তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।”
এদিন বেলা ১১ টার ভোটদানের জন্য সমস্ত সদস্য ব্লক অফিসে হাজির হন। তখন অফিসের বাইরে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শিবিরে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। এদিন মোট নয়টি স্থায়ী সমিতি গড়ার জন্য ভোট গ্রহণের আয়োজনকরা হয়। ভোট প্রক্রিয়ায় প্রথমে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির ভোট গৃহীত হয়। সেই ভোটের রেজাল্টে দেখা যায়, বিজেপি ২৪টি এবং তৃণমূল ১৮টি ভোট পেয়েছে। আর এই রেজাল্টের পরই তৃণমূল কংগ্রেসের শেখ আজিজুল রহমান অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তড়িঘড়ি করে তাকে ব্লক অফিসের পাশে থাকা নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার পর তৃণমূলের তরফে ভোট প্রক্রিয়া প্রিসাইডিং অফিসার, তথা ব্লকের ভিডিও সুমিতা সেনগুপ্তের কাছে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয়। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর, প্রিসাইডিং অফিসার অন্যান্য স্থায়ী সমিতি গঠনের জন্য ফের ভোট গ্রহণের কাজ শুরু করেন। তার প্রতিবাদে তৃণমূল সদস্যরা ভিডিও অফিস সে থেকে ওয়াকআউট করে ভিডিও বিশ্বের মূল গেটের সামনে ধরনায় বসেন। পরে পুলিশ তাদেরকে হটিয়ে দেয়। উলটোদিকে বিজেপি সমর্থকরা তখন নন্দীগ্রাম থানা মোড়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও উত্তেজনা পরিবেশ তৈরি হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে হটিয়ে দেয়।
এরপর বাকি স্থায়ী আটটি স্থায়ী সমিতিতে ভোট হলে সব কটিতে বিজেপি (BJP) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। তৃণমূলের স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য, এদিনের ভোট পর্বের ভোটার সামসুল ইসলাম জানান, “বিডিও গায়ের জোরে ভোট করিয়েছেন। বিজেপিকে জেতানোর জন্যই এমন পক্ষপাতিত্ব করেছেন তিনি। দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। উনার মূল্যবোধ, নীতি আদর্শ বলে কিছুই নেই। আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করেছেন, চক্রান্ত করেছেন দিব্যেন্দু। আমরা আদালতে যাব।”
নন্দীগ্রামের বিধায়ক হিসাবে ভোটদান পর্বে হাজির ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও। এই জয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি শাসকদলকে বিঁধে বললেন,”আমরা ২৩ জন ছিলাম। পেয়েছি ২৪ টা ভোট। তৃণমূল কংগ্রেস ঘর ঠিক না রাখতে পারলে আমার কী করার আছে। কেউ ভোট দিতে জানে না। ভুল ভোট দেয়। অশিক্ষিত তৃণমূল এরা কি করবে। এরা আরও পড়াশোনা করুক। আমার সঙ্গে লড়তে গেলে দম লাগবে।”