ক্লাসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ শিক্ষিকা প্রতিভা হেমব্রম দেখলেন, করি়ডরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা করছেন অচেনা এক ব্যক্তি। প্রতিভা ভেবেছিলেন, অভিভাবক হবেন হয়তো কোনও! জিজ্ঞাসাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও উত্তর পাননি। তিনিও ক্লাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে শুরু করেন। আচমকাই বন্দুক উঁচিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়েন ওই ব্যক্তি। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘‘একদম নড়বেন না!’’
বুধবার দুপুরে মালদহের মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলের ভরা ক্লাসঘরে ঢুকে পড়ে বন্দুকবাজের শাসানির ঘটনা রাজ্য জুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বন্দুকবাজের সঙ্গে চলা ৪৫ মিনিটের সেই টানাপড়েনের বর্ণনা দিলেন ওই সময় ক্লাসেই উপস্থিত থাকা শিক্ষিকা প্রতিভা হেমব্রম। প্রতিভা জানান, তখন সপ্তম শ্রেণির বাংলার ক্লাস ছিল। ওই ক্লাসরুমের আশপাশেই এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। প্রতিভার কথায়, ‘‘স্কুলে যে হেতু মাঝেমধ্যেই অভিভাবকেরা আসেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, উনিও হয়তো কারও অভিভাবক! এর পর আমি ক্লাসে ঢুকে যাই।’’
শিক্ষিকা জানান, ক্লাসে গিয়ে তিনি পড়ানো শুরু করতেই ওই ব্যক্তি আচমকা ঘরে ঢুকে পড়েন। এর পর বন্দুক উঁচিয়ে চলে হুমকি। প্রতিভা বলেন, ‘‘ঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, ‘আপনি একদম চুপচাপ থাকবেন। নইলে বিপদ আছে।’ এর পরেই লোকটা ছাত্রছাত্রীদের দিকে পিস্তল তাক করে। বলতে থাকে, ‘আমার ছেলে কিডন্যাপ হয়েছে। আমিও এই ক্লাসের ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলব! গুলি করে দেব।’’’ এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই স্তম্ভিত হয়ে যান প্রতিভা। বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, পিস্তলটা খেলনা পিস্তল! পরে দেখলাম, না! সত্যিকারের পিস্তল। তখন আমার মাথা কাজ করছিল না। আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। অতগুলো বাচ্চার দিকে বন্দুক তাক করে হুমকি দিচ্ছে! আর বাচ্চারাও কান্নাকাটি করছিল। কী করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’
ক্লাসঘরে ৪৫ মিনিটের এই টানাপড়েনের পর অবশ্য ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম দেব বল্লভ। তাঁর বয়স ৪৪। বাড়ি পুরাতন মালদহের মুচিয়া নেমুয়া এলাকায়। স্কুলে বন্দুক হাতে দেব বল্লবের যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার স্ত্রীকে বলেছে, তোমার স্বামীর মতো এমন বাজে চরিত্রের লোক হয় না। সেই রেকর্ড আমার কাছে আছে। আমাকে বলেছে, তোমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ।’’ এ সব চলতে থাকার সময় কয়েক জন পুলিশকর্মী ঘরে ঢুকে দেব বল্লভকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে কাবু করেন। এর পর তাঁর কাছে থাকা অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নিয়ে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে বাইরে বার করে আনা হয়।