বাসনপত্র, গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে রইল। তার বদলে স্কুলের দেওয়াল আলমারি খুলে শেক্সপিয়র অমনিবাস, শরৎ রচনা সমগ্র, পাগলা দাশু, ঠাকুরমার ঝুলির মতো নতুন নতুন গল্পের বই নিয়ে চম্পট দিল চোর। শুনতে অবাক লাগলেও সোমবার স্কুল খুলে এমনই কাণ্ডের কথা জানতে পেরেছেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহরের উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। যা দেখে তাঁরা রীতিমতো হতবাক।
ওই স্কুলে ৫৯ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন তিন জন শিক্ষিকা। সম্প্রতি স্কুলে রং করানো হয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, সোমবার স্কুল খোলার পরে শিক্ষিকারা দেখেন, অফিস ঘরের আসবাবপত্র লন্ডভন্ড। ওই ঘরেই রয়েছে স্কুলের গ্রন্থাগারের দেওয়াল আলমারি। সেখানে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে শতাধিক গল্পের বই ছিল।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আলমারি থেকে ক্ষীরের পুতুল, বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা গল্প, আম আঁটির ভেঁপু, পথের পাঁচালী, উপেন্দ্রকিশোর রচনা সমগ্র, টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাঘা বাইনের মতো ৫৩টি নতুন বই চুরি গিয়েছে। সেই সঙ্গে চুরি গিয়েছে অফিস ঘরের সিলিং ফ্যান। ওই ঘরের মধ্যেই ছিল দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার ও বাসনপত্র। রান্নার গ্যাসের অগ্নিমূল্যের বাজারে চোর সে সব নেয়নি। বাসনপত্রেও তার নজর পড়েনি। অন্যান্য ক্লাসঘরের সিলিং ফ্যানেও হাত পড়েনি। এ দেখে প্রশ্ন উঠছে— চোর শুধুমাত্র কি গল্পের বই চুরি করতেই স্কুলে ঢুকেছিল? আর গরমে সেই বই পড়ার জন্যই কি খুলে নিয়ে গেল সিলিং ফ্যান?
চোরের এমন কাণ্ড দেখে তাজ্জব এলাকাবাসী থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অফিস ঘরের জানালার একটি পাল্লার একাংশ ভাঙা অবস্থায় ছিল। কিন্তু জানলার রেলিং অক্ষত। তা হলে প্রশ্ন উঠছে, চোর ঢুকল কোথা থেকে? ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
সোমবার গুসকরা ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মহুয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় সম্প্রতি ওই বইগুলি কেনা হয়। সেই সমস্ত বই পড়ুয়াদের নিয়মিত দেওয়া হত পড়ার জন্য। আলমারিতে পুরনো বই থাকলেও সেগুলি না নিয়ে নতুন বইগুলিই চোর নিয়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে বেশ কয়েকটি সূত্র তারা পেয়েছে। চোরের খোঁজ চলছে। আশা, শীঘ্রই চোরের খোঁজ মিলবে।
ডিএসপি (ডিএনটি) সৌরভ চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন বই চোরের কথা আগে কখনও শুনিনি। চুরির কিনারা করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’