সঙ্কট আরও জোরালো হচ্ছে বাংলাদেশে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা। সরকার পক্ষ কথা বলতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠালেও মানতে চাননি তাঁরা। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়’। দু’পক্ষের সংঘাতে বাংলাদেশে শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে আরও তিন জনের। বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন চলাচল। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। এমনকি, মিছিল, সমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাতেও আন্দোলন থামেনি।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সে দেশে আন্দোলনের জেরে সংঘাতের বলি ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। শুক্রবার আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। তাঁদের মধ্য দু’জনের পরিচয় মিলেছে। তৃতীয় জনের পরিচয় জানা যায়নি। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। অন্য দিকে, সে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে সংবাদ সংস্থা এএফপি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সরকার এবং পড়ুয়াদের সংঘাতের জেরে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই ২৮টি দেহের সন্ধান মিলেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিন্টের দাবি, বাংলাদেশে নিহত হয়েছেন ৬৪ জন।
আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজধানী ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন শহরে এই সমস্যা রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। সরকারি সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, গুজব ছড়ানো বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা।
রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন পরিষেবাও। রাজধানী ঢাকার মধ্যে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ রেল পরিষেবা। শুক্রবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। প্রথম আলো’ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকায় কোনও ট্রেন প্রবেশ করবে না। এমনকি, ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন কোথাও যাবেও না। সরকারি সূত্রে খবর, আন্দোলনকারীরা যাতে ট্রেন পরিষেবা না পান, সে কারণেই এই ব্যবস্থা।
তার পরেও আন্দোলন দমানো যায়নি বাংলাদেশে। শুক্রবারও ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছর্রা গুলি, রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। সরকার পক্ষের দাবি, পড়ুয়াদের বদলে জামাত এবং বিএনপি কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। শাসক দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপরও হামলা চালানো হচ্ছে। রাজধানীর আকাশে নজরদারির জন্য টহল দিয়েছে হেলিকপ্টারও। কিন্তু পড়ুয়ারা অনড়। দেশে কোটা সংস্কার করতেই হবে। সরকারের তরফে আলোচনার ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ-ও জানানো হয়েছিল, হাসিনার সরকারও কোটা সংস্কারেরই পক্ষে। কিন্তু পড়ুয়ারা আলোচনা প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁদের সাফ জবাব, ‘‘রক্ত মাড়িয়ে আলোচনা নয়।’’
এই আবহে বাংলাদেশের জেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এএফপি-সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, নরসিংডি জেলার একটি জেলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। জেল ভেঙে পালিয়ে যান বহু বন্দি। এএফপিকে জেলের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘আন্দোলনকারীরা জেলে আগুন ধরিয়েছেন। বন্দিরা পালিয়ে গিয়েছে। কত জন পালিয়েছেন, জানি না। তবে সংখ্যাটা শতাধিক হবে।’’
১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া, সংরক্ষণের সুবিধা পান নারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও কিছু সংরক্ষণ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মোট ৫৬ শতাংশ আসন চলে গিয়েছে সংরক্ষণের খাতায়। বাকি ৪৪ শতাংশ আসন রয়েছে সাধারণের জন্য। যেখানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে।
শুক্রবার নিহত তিন
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের ঘটনায় শুক্রবার সে দেশে আরও তিন জন মারা গিয়েছেন। হাসাপাতাল সূত্রে সেই খবর জানা গিয়েছে। নিহত তিন জন হলেন, আবদুল গনি, রাকিব এবং রাসেল। ৪৫ বছরের আবদুল এবং ২২ বছরের রাকিবকে শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়। সেখানে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে রাসেলকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকেও। আবদুলকে বাড্ডা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর ছেলে আল আমিন জানান, ঢাকার গুলশনের একটি হোটেলে স্যানিটরি মিস্ত্রীর কাজ করতেন তিনি। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বার হন। পরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন বলে খবর মেলে। রাকিবের মাথায় আঘাত লেগেছিল। তাঁর এক পরিজন জানিয়েছেন, রাকিবের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তিনি বিদ্যুতের কাজ করতেন। রাসেলের পরিচয় এখনও মেলেনি।
সংঘর্ষ জারি
শুক্রবারও ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছর্রা গুলি, রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকে উত্তাল ঢাকা। সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ দাবি করেছে, তাঁর আঁচ ছড়িয়েছে দেশের ৪৭টি জেলায়। সেখানে শুক্রবারও দিনভর বিক্ষোভ চলেছে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, পড়ুয়াদের উপর ‘হামলা’র প্রতিবাদে রাজধানীতে পথে নামার কথা ছিল বিএনপি-জামাতের কর্মীদের। অভিযোগ, কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই রুখে দেয় পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বেশ কিছু জায়গায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় পুলিশ কর্মীরা। ঘটনায় কয়েক জন বিএনপি কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ‘প্রথম আলো’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, পড়ুয়াদের বদলে জামাত এবং বিএনপি কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা হিসাবে ব্যবহার করে নৈরাজ্য’ তৈরি করছে বলেও দাবি তাঁর। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর বিএনপি হামলা করছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
মিছিল, সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা
দফায় দফায় সংঘর্ষ আর হিংসার মধ্যেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন এই ঘোষণা করেন। সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৩টেয় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। শাসকদল আওয়ামী লীগ সমাবেশ ডেকেছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। ঢাকা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বড় ধরনের হিংসা ও প্রাণহানির আশঙ্কাতেই জমায়েতে রাশ টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও হিংসা ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে।
ইন্টারনেট পরিষেবায় রাশ
বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজধানী ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন শহরে এই সমস্যা শুরু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, সমাজমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহল নানা গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ‘অস্থিতিশীল’ করতে চাইছে। তাই সাময়িক ভাবে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের বিষয়ে আগে থেকে কোনও ঘোষণা হয়নি বলেও জানান তিনি। সরকারি একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, হতাহতের সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী সংখ্যা প্রকাশ্যে আসছে। সমাজমাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই সাময়িক ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
কার কত সুবিধা
১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া, সংরক্ষণের সুবিধা পান নারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও কিছু সংরক্ষণ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মোট ৫৬ শতাংশ আসন চলে গিয়েছে সংরক্ষণের খাতায়। বাকি ৪৪ শতাংশ আসন রয়েছে সাধারণের জন্য। যেখানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু ছিল, তাতে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ২০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ ছিল। বাকি ৮০ শতাংশ ছিল জেলার সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যেই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। ১৯৭৬, ১৯৮৫, ১৯৯৭ সালে দফায় দফায় কোটা ব্যবস্থার বদল হয়। তার পরেও দফায় দফায় এই ব্যবস্থায় অদলবদল হয়। সংরক্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রথম থেকেই চাপা অসন্তোষ ছিল। আন্দোলন প্রথম বড় আকার নেয় ২০১৮ সালে। আন্দোলনের চাপে পড়ে সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সংরক্ষণ বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। কিন্তু সংরক্ষণ বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে আদালতে যান কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেয়। আবার আগের মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় বাংলাদেশে। উচ্চ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল বিভাগে আবেদন করে হাসিনা সরকার। তার মাঝেই চলতি মাসে দেশ জুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়।
ঢাকায় বন্ধ ট্রেন
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার মধ্যে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ রেল পরিষেবা। শুক্রবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। প্রথম আলো’ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকায় কোনও ট্রেন প্রবেশ করবে না। এমনকি, ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন কোথাও যাবেও না। যে হেতু বাংলাদেশের বেশির ভাগ ট্রেনই ঢাকার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে, তাই গোটা দেশেরই ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কেন ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে? সরকারি সূত্রে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, আন্দোলনকারীরা যাতে ট্রেন পরিষেবা থেকে সুবিধা না পান, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত। বাতিল করা হয়েছে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বন্ধন এক্সপ্রেস। ঢাকা থেকে কলকাতার মধ্যে চলে এই মৈত্রী এক্সপ্রেস। বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে খুলনার মধ্যে যাতায়াত করে। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার ঢাকা থেকে ছাড়বে না মৈত্রী এক্সপ্রেস। পাশাপাশি, শনিবার ঢাকার উদ্দেশে কলকাতা থেকে যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ছাড়ে, সেটাও বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার ট্রেন চলাচল করবে বলেও দাবি সরকারি সূত্রের। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে লোকাল, মেল, এক্সপ্রেস মিলিয়ে প্রতি দিন ৩০০-র বেশি ট্রেন চলে।
প্রস্তাব খারিজ আন্দোলনকারীদের
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সরকারের তরফে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, নীতিগত বিষয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে সরকারের। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও বর্তমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে নীতিগত ভাবে সহমত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বসব। তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) যখনই বসতে চাইবেন, তা যদি আজ হয়, তা হলে আজই বসতে রাজি আছি আমরা।’’ কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবরা। তাঁদের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতাদের তরফে সমাজমাধ্যমে এ কথা জানানো হয়েছে। মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়কারী সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এক দিকে গুলি আর লাশ, অন্য দিকে সংলাপ! আমার ভাইয়ের রক্তের উপর দিয়ে কী ভাবে সংলাপ হতে পারে?’’ আর এক সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়।’’
জেলে আগুন
বাংলাদেশের জেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এএফপি-সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, নরসিংডি জেলার একটি জেলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। জেল ভেঙে পালিয়ে যান বহু বন্দি। এএফপিকে জেলের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘আন্দোলনকারীরা জেলে আগুন ধরিয়েছেন। বন্দিরা পালিয়ে গিয়েছে। কত জন পালিয়েছেন, জানি না। তবে সংখ্যাটা শতাধিক হবে।’’