বৃষ্টি নেই, বাঁকুড়ায় চাষের কাজ বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের

জুলাই মাসের শেষের দিক, অথচ চাষাবাদের কাজ শুরুই করা গেল না। সারা বাঁকুড়া জেলাজুড়ে একই চিত্র। যে কিছু এলাকায় বীজতলা হয়েছে তা এখন বাঁচিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে বলে বক্তব্য চাষিদের।

চাষাবাদের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের কথায় অম্বুবাচীর সময় অর্থাৎ রথের সময়ে সাধারণত বীজতলা তৈরী হয়ে যায়। এবছর বৃষ্টির দেখা নেই বলে বীজতলা তৈরী করতে দেরি হয়েছে। চাষ কি ভাবে হবে জানি না। তাদের কথায় প্রবাদ আছে, “আশায় মরে চাষা,” এই প্রবাদ বাক্য বাঁকুড়ার চাষিদের কাছে একদম প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের একাংশ যখন বন্যা বিধ্বস্ত, তখনই উলটো ছবি দক্ষিণবঙ্গের জেলা বাঁকুড়ায়। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পার হলেও জেলার অধিকাংশ এলাকা সেচ বিহীন। বৃষ্টির উপরেই ভরসা করে এখানের চাষাবাদ। সে কারণেই শুধুমাত্র বৃষ্টির অভাবে জুলাইয়ের মধ্যগগনে পৌঁছেও চাষের কাজ শুরু করতে পারেননি জেলার একটা বড় অংশের কৃষিজীবী মানুষ। অথচ প্রায় শিল্পবিহীন কৃষিনির্ভর এই জেলায় চাষাবাদই হলো অর্থনীতির অন্যতম উৎস।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছরে বাঁকুড়া জেলায় ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই মুহূর্তে প্রায় ৮০ শতাংশ বীজতলা ফেলা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে সেই বীজতলা বাঁচিয়ে রাখাই চাষিদের কাছে অন্যতম বড় কাজ।

সূত্রের খবর, মুকুটমণিপুরের কংসাবতী সেচ প্রকল্প ও ডিভিসি-র সৌজন্যে জেলার একটা অংশ ‘সেচ সেবিত’ এলাকা হিসেবে ঘোষিত হলেও এখনও বৃষ্টির উপরেই ভরসা করতে হয়। কিন্তু চলতি বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে জেলার কৃষিজীবি মানুষের। ওন্দার কালিসেন গ্রামের চাষি লক্ষীকান্ত ঘোষ, জগদল্লা গ্ৰামের শিবদাস দাস, নবান্দা গ্ৰামের কমল দিয়াশী সবারই বক্তব্য ‘মূলতঃ বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করেই আমরা চাষাবাদ করি। এই বছর সেভাবে বৃষ্টি হয়নি, তার মধ্যেও অতিরিক্ত খরচে পাম্পের জলের ব্যবস্থা করে কোনোরকমে ধানের বীজ তলা বাচিঁয়ে রেখেছি কেউ কেউ ধান রোওয়ার কাজ শুরু করেছি। এরপর বাকিটা দৈব ভরসা’। প্রচুর খরচ আর অমানুষিক পরিশ্রম করে লাগানো ধান শেষ পর্যন্ত কি পরিণতি হবে ভগবানই জানেন।

জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘বাঁকুড়া জেলায় জুন ও জুলাই মাসেই ৩৫-৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি আছে। এর পরেও ৮০ শতাংশ বীজতলা তৈরি। এই বছর বাঁকুড়া জেলায় ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে এখনও পর্যন্ত ১৩০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা রোপন করা হয়েছে’। জুলাই মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে সহজেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

কৃষকদের বক্তব্য ‘শুধু এই বছর বলে নয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে সময়ে চাষাবাদের জন্য বৃষ্টির দরকার, সেই সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে প্রত্যেক বছরেই চাষের ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য বিকল্প ব্যবস্থার দরকার’। এই অবস্থায় গ্ৰামের মানুষ টিভি রেডিওর দিকে তাকিয়ে শুধুমাত্র বৃষ্টির খবর জানতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.