যে সন্তান পৃথিবীতে আসেনি, তাকে জন্মের আগেই দত্তক নেওয়ার কোনও আইন ভারতে নেই, একটি মামলায় এমনটাই মন্তব্য করল কর্নাটক হাই কোর্ট। শিশুর দত্তকের স্বীকৃতি চাওয়া এক দম্পতির আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
শিশুকে দত্তক নেওয়ার বিষয়টিতে আইনের সম্মতি চেয়ে কর্নাটক হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জন্মদাতা বাবা-মা এবং পালক পিতা-মাতা। বিচারপতি বি ভিরাপ্পা এবং বিচারপতি কে এস হেমলেখার ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য যে দিন চুক্তি হয়েছিল, সন্তান তখনও ভূমিষ্ঠ হয়নি। শিশুটির জন্ম হয় চুক্তির ৫ দিন পর, ২০২০ সালের ২৬ মার্চ। ফলত, এক গর্ভস্থ শিশুকে দত্তক নেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। ভারতে এমন কোনও আইন নেই।’’
কর্নাটকের একটি নিম্ন আদালতে শিশুকন্যাটির পিতা-মাতা হিসাবে স্বীকৃতির জন্য একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন পালক বাবা-মা। বিচারক সেখানে তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেন অন্য যুক্তিতে। নিম্ন আদালত জানায়, এই চুক্তি শিশুটির পক্ষে কল্যাণকর নয়। এর পর তাঁরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে উপযুক্ত আইনের অভাবে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিশুটির জন্মদাতা বাবা এবং মা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু যাঁরা তাকে দত্তক নিতে চেয়েছেন, তাঁরা মুসলমান। আদালতে জন্মদাতা বাবা-মা জানিয়েছেন, দারিদ্রের কারণে তাঁরা শিশুকন্যার দেখাশোনা করতে পারবেন না। আর ওই মুসলমান দম্পতির কোনও সন্তান না থাকায় তাঁরা দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাই মায়ের গর্ভে থাকাকালীন শিশুকে দত্তক নেওয়ার জন্য চুক্তি হয়। কর্নাটক হাই কোর্ট এ ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে।
দারিদ্রের কারণে শিশুকন্যাকে দত্তক দেওয়ার যুক্তিও আদালতে গ্রাহ্য হয়নি। আদালত জানিয়েছে, সরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে শিশুকে মানুষ করা কঠিন নয়। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য সরকার নানা প্রকল্প নিয়ে এসেছে। তাই দত্তকের যুক্তি গ্রাহ্য নয়।
চুক্তির পর থেকে শিশুকন্যা ওই মুসলমান দম্পতির কাছেই মানুষ হচ্ছিল। আদালত তাকে জন্মদাতা বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে।