মোদীর নিরাপত্তা বলয়ে পাঁচটি স্তর! এসপিজি, এনএসজিকে টপকে কী করে কাছে গেলেন যুবক?

জাতীয় যুব উত্‍সব উপলক্ষে কর্নাটকের হুবলিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে একটি রোড শোয়ে গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন। সেই সময় নিরাপত্তা বেষ্টনী এড়িয়ে তাঁর খুব কাছে চলে আসেন এক যুবক। তাঁর হাতে মালা। প্রধানমন্ত্রীর এত কাছে কী করে চলে এলেন ওই যুবক?

নিরাপত্তায় এত বড় গলদ হল কী ভাবে? তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আলোচনাও চলছে পুরোদমে। সেই আবহেই দেখে নেওয়া যাক কেমন হয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়।

মোট পাঁচ বলয়ের বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা থাকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা। এ ছাড়াও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও একটি বলয় তৈরি করা হয়। অর্থাত্‍, সমস্ত নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যাওয়া রীতিমতো অসাধ্যসাধনেরই নামান্তর। অতীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলার ঘটনার কথা মাথায় রেখে বর্তমান জমানায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ফাঁক রাখা হয় না। তবুও ঘটে যায় হুবলির মতো ঘটনা। এ যাত্রায় খারাপ কিছু হয়নি। হাতের মালা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার মুহূর্তেই ওই যুবককে সরিয়ে দেন নিরাপত্তা আধিকারিকরা। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া কতটা উদ্বেগের, তা নিয়ে চিন্তায় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

নিরাপত্তা খুঁটিনাটি দেখতে গিয়ে প্রথমেই আসে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির কথা। ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর চড়ার জন্য আনা হয়েছে বিশেষ ‘মার্সিডিজ় মেব্যাক এস৬৫০’। মেব্যাককে গাড়ি না বলে দুর্গ বলাই ভাল। দুনিয়ার অন্যতম সেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ মেব্যাককে দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার হুবলিতে প্রধানমন্ত্রী যে গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে জনতার অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন, তা কিন্তু মেব্যাক নয়। তা ছিল টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এ বার আসা যাক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ের কথায়। মোট পাঁচটি আলাদা আলাদা বলয় থাকে নিরাপত্তার জন্য।

প্রথম বলয় অর্থাত্‍ প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের বৃত্তের নিরাপত্তার দেখভাল করে ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি)।

দ্বিতীয় বৃত্তের নিরাপত্তার দেখভালের ভার প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের উপর। এসপিজি কম্যান্ডোদের সঙ্গেই তাঁদেরও প্রশিক্ষণ হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ের তৃতীয় বৃত্তের দায়িত্ব ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’ (এনএসজি)-এর। এনএসজি কম্যান্ডোরা থাকেন দায়িত্বে।

নিরাপত্তা বেষ্টনীর চতুর্থ ধাপে থাকেন নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নিয়োজিত বিশেষ কর্মীরা। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গেই থাকেন প্রধানমন্ত্রী যে রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন সেই রাজ্যের নিরাপত্তা আধিকারিকরা।

পঞ্চম তথা শেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকে গোয়েন্দা কুকুর, কম্যান্ডো ও পুলিশের নিরাপত্তা সম্পন্ন গাড়ি। সেখানেই থাকে জ্যামার গাড়িও। সব ক’টিতেই সংযুক্ত থাকে বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রও।

প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে থাকে সাধারণত এক ডজনের বেশি গাড়ি। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যে গাড়িতে চড়েন হুবহু তেমনই দেখতে আরও দু’টি গাড়ি থাকে কনভয়ে। প্রতিটি গাড়ির উপর সর্বক্ষণ কড়া নজর রাখেন এনএসজি এবং এসপিজির ‘শার্প শুটার’রা। থাকে বোমা নিরোধক গাড়ি। মার্সেডিজ়ের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সও থাকে কনভয়ে।

এত বড় কনভয় এবং নিরাপত্তার জন্য খরচও কম নয়। ভারত সরকারের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, মোদীকে দৈনিক নিরাপত্তা দিতে সরকারি ভান্ডার থেকে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় দু’কোটি টাকা। এবং সবচেয়ে তাত্‍পর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এসপিজি দেশে কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই নিরাপত্তা যোগায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.