দুর্গাপুরকাণ্ডে ধৃত নির্যাতিতার সহপাঠীও! তবে ধর্ষক এক জনই, অনুমান পুলিশের, যদিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে সব ধৃতের ভূমিকাই

দুর্গাপুরকাণ্ডে গ্রেফতার হলেন নির্যাতিতার সহপাঠীও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক বৈঠক করার অনতিবিলম্বে ওই যুবককে পাকড়াও করে পুলিশ। ডাক্তারি ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে হল ছয়।

দুর্গাপুরের ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ করেছেন এক জনই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাকিদের ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার ঘটনার চার দিন পর এমনই জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবারই নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। দুপুরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে পরানগঞ্জের সেই জঙ্গলে যায় পুলিশ। সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে আসানসোল-দুর্গাপুরের কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্যাতিতার সহপাঠীর ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।’’ তিনি জানান, সহপাঠী শুক্রবার রাতে ঘটনার সময় যে পোশাক পরেছিলেন, সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সমস্ত অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষা হবে।

আসানসোল-দুর্গাপুরের কমিশনার এ-ও জানান, অভিযোগের দু’দিনের মধ্যে সকল অভিযুক্তকে তাঁরা গ্রেফতার করেছেন। শুক্রবার রাত ১টা ৫ মিনিটে মৌখিক ভাবে খবর পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী মোবাইল ভ্যান নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। ৩টে ৩৮ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ করেন। সুনীলের কথায়, ‘‘নির্যাতিতা এবং তাঁর বন্ধু ছাড়া ঘটনাস্থলে যে পাঁচ জন ছিলেন, তাঁদের সকলকে গ্রেফতার করেছি। ওই দিন তাঁরা যে পোশাক পরেছিলেন, সেগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি। নির্যাতিতার বন্ধুকে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পুনর্নির্মাণ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যে বিভিন্ন নমুনা পাওয়া গিয়েছে এবং নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, এক অভিযুক্তই ধর্ষণ করেছেন। বাকিদের কী ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এখনও তদন্তের খানিকটা বাকি রয়েছে। ফরেন্সিক এবং মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। নির্যাতিতার সহপাঠীকে বার বার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই অপরাধে তাঁর ভূমিকা ঠিক কী ছিল, সেটা শীঘ্রই জানা যাবে।

ওড়িশার মেয়ে এবং বাংলার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে গত চার দিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল। নির্যাতিতার বাবা-মা দাবি করেছেন, সহপাঠীর সঙ্গে অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাবার খেতে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন মেয়ে। সে সময়েই তাঁর সঙ্গে ওই মারাত্মক ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘১০টা নাগাদ মেয়ের এক সহপাঠী আমাদের ফোন করে জানায়, মেয়ের গণধর্ষণ হয়েছে! আমরা জলেশ্বরে থাকি। মেয়েকে এখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। শুনলাম, মেয়েকে খাবার খাওয়াতে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে গিয়েছিল ওর এক সহপাঠী। যখন দু’-তিন জন মেয়েকে ঘিরে ফেলেছে, তখন সহপাঠী ওকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে হস্টেল অনেক দূরে।’’ নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘মেয়েকে ধর্ষণ করার পর ওর মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেটা ফেরত দেওয়ার জন্য ৩ হাজার টাকা চায় ওরা। কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। মেয়ে তো ক্যাম্পাসের বাইরে যেতেই চায়নি। তাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে এক সহপাঠী নিয়ে যায়।’’

পরিবারের দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশ। তারা জানিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে প্রত্যেকটা ধাপ ধরে ধরে। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী লাগলে আমরা নির্যাতিতা এবং পরিবারকে দিতে রাজি আছি। নির্যাতিতার পরিবারকে আমাদের সমস্ত আধিকারিকের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। আমরা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং ফরেন্সিক দল এসেও অনেক নমুনা সংগ্রহ করেছে। তদন্তে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি।’’

আগে যা ঘটেছে

গত শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ডাক্তারি ছাত্রী। গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ আগেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল। গত রবিবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক সকলকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তার পরে রবিবার রাতে এবং সোমবার বেলার দিকে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে এক সহপাঠী-বন্ধুর সঙ্গে বাইরে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় হাঁটছিলেন। সেই সময় অভিযুক্তেরা প্রথমে তাঁকে হেনস্থা করেন। তার পর তাঁকে রাস্তার পাশে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সহপাঠী-বন্ধুর বিরুদ্ধে।

মোহনের চাপ

দুর্গাপুরকাণ্ডে দোষীদের কঠোর শাস্তির জন্য সব জায়গা থেকে চাপ তৈরি করা হবে। ‘নির্যাতিতা’র মাকে সেই বার্তা দিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝী। সোমবার ‘নির্যাতিতা’ এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দুর্গাপুরে গিয়েছিলেন ওড়িশা মহিলা কমিশনের প্রধান শোভনা মোহান্তি। ওই সময় নির্যাতিতা, তাঁর পরিবার এবং মহিলা কমিশনের প্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। পরে তাঁর দফতর থেকে জানানো হয়, দুর্গাপুরকাণ্ডে দ্রুত সুবিচারের জন্য সর্বস্তর থেকে চাপ তৈরি করা হবে বলে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন মোহন। ফোনালাপের একটি ভিডিয়ো পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিকে পাঠায় সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। সেখানে ‘নির্যাতিতা’র উদ্দেশে মোহন বলেন, “একদম চিন্তা করবেন না। ওড়িশা সরকার আপনার এবং আপনার পরিবারের সঙ্গে সব রকম ভাবে রয়েছে। আমরা সব কিছু দেখে নেব। ধৈর্য হারাবেন না। মনে সাহস রাখুন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.