পশ্চিম এশিয়া জুড়ে অশান্তির প্রেক্ষিতে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা চাইল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সংস্থার রাজনীতি বিষয়ক বিভাগের প্রধান রোজমেরি ডিকার্লো বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, ‘এই বিষয় (ইরানের পরমাণু চুক্তি) নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করার এখনই সঠিক সময়।’’
২০১৫ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল নিরাপত্তা পরিষদের ছ’টি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো বিপুল আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ। যা কার্যকরও হয়েছিল।
এই চুক্তির ফলে এক দিকে যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে চিন্তা কমেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার, তেমনই প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি ফিরে পেয়েছিল ইরান। কিন্তু ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া ইস্তক ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে এসেছিলেন, ‘‘ওই চুক্তি ওবামার অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধে হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের।’’ শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মে মাসে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি। তাই এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’’ জো বাইডেনের জমানায় নতুন করে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল ওয়াশিংটন। ঘটনাচক্রে, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের ঠিক আগেই তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে পদক্ষেপ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চলতি মাসের গোড়ায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিল, যদি প্রয়োজন হয়, তবে ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হয়ে ওঠা আটকাতে তারা সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত আছে। এর পর চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের প্রতিনিধি আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, ‘‘তেহরানের উপর নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা বেআইনি। এমন কোনও প্রচেষ্টা হলে তার পরিণাম ভাল হবে না।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’ (আইএইএ) চলতি মাসে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছে। তাদের কাছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। যদিও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়।