২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে খবর, আগামী ৮ মে ওই মামলার শুনানি হতে পারে। সেই আবহে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা জানালেন, সরকারের পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিল করা নিয়েও ক্ষুব্ধ চাকরিহারাদের একাংশ।
চাকরিহারা শিক্ষকদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র আহ্বায়ক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। যোগ্যদের পক্ষে সওয়াল করছে না সরকার। আমাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। রিভিউ পিটিশনের খসড়া নিয়েও সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করল না। উপরন্ত, আমরা দেখছি যাঁরা ‘অযোগ্য’, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। এটা থেকেই পরিষ্কার যে, সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। যদি সরকার এ হেন দ্বিচারিতা করে, আমরা বিধানসভা ভোট করতে দেব না।’’
চাকরিহারা গ্রুপ সি শিক্ষাকর্মী সত্যজিৎ ধরও বলছেন, ‘‘আমাদের মূল দাবি সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আমাদের চাকরিটা ফিরিয়ে আনুক। আমরা যোগ্য। আমরা কাজে ফিরতে চাই।’’ প্রসঙ্গত, এর আগেও রায়ে বদল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাদের আবেদন ছিল, এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। অনেক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যা শূন্যে গিয়ে ঠেকবে। যার ফলে ভুগতে হবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। গত ১৭ এপ্রিল পর্ষদের ওই আবেদন মেনে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। শর্তসাপেক্ষে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, আপাতত নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকেরা স্কুলে যেতে পারবেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে। তবে শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে ওই রায় কার্যকর হবে না। ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। ওই নির্দেশ মোতাবেক চলতি মাসেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা। সেই আবহেই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। তাতে খানিক হলেও আশার আলো দেখছেন শিক্ষাকর্মীরা।
তবে ওএমআরে গলদ থাকায় এসএসসির ‘যোগ্য’-তালিকায় যাঁদের নাম আসেনি, সরকারের উপর আস্থা রাখছেন তাঁরা। এমনই এক চাকরিহারা শিক্ষক ‘ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন-টিচিং ফোরাম ২০১৬’-র সদস্য বিপ্লব বিবার। বিপ্লবের কথায়, ‘‘সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে, তাতে আমরা অবশ্যই সহমত পোষণ করছি। আমাদের হাতে এই মূহূর্তে এটাই একমাত্র রাস্তা। আমরাও আমাদের মঞ্চের তরফ থেকে রিভিউ পিটিশনের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছি।’’
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে গত ৩ এপ্রিল এসএসসির ২৬ হাজার (আদতে ২৫,৭৩৫) চাকরি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ অনিয়মের অভিযোগে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয়। শীর্ষ আদালতের যুক্তি ছিল, সঠিক তথ্য না থাকায় যোগ্য এবং অযোগ্যদের পৃথকীকরণ করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরো প্যানেল বাতিল করা হচ্ছে। এসএসসিকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, ‘দাগি’ (টেন্টেড) বা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের বেতন ফেরত দিতে হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলীর একটিও এখনও পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। এসএসসি এবং রাজ্য আগেই জানিয়েছিল, পুরো রায় খতিয়ে দেখে যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাইয়ের পর পুনর্বিবেচনার আর্জি (রিভিউ পিটিশন) করা হবে। সেই মতো সেই মতো রায় ঘোষণার এক মাসের মাথায় সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাল রাজ্য। আগামী বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ মামলাটি শুনতে পারে। যদিও পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হতে পারে বলে মনে করছেন মূল মামলাকারীদের আইনজীবীরা। বেশিরভাগের মতে, ওই রায় পুনর্বিবেচনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পূর্বের রায়ই বহাল রাখতে পারে আদালত।