প্রায় এক দশক ধরে প্রতিবছর বর্ষায় মশার (Mosquito) দাপট বাড়ে। দাপট বাড়ে ডেঙ্গুর। ফলে বাড়াবাড়ি হয় ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের। গত বছর তো আবার ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেকটাই বাড়ে। উদ্বেগ বাড়ে প্রশাসনের। ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল কর্মসূচির তথ্য দেশে প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গ।
কিন্তু এবার যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য এখন থেকেই অর্থাৎ গ্রীষ্ম থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টানা মশাবাহিত রোগ নিয়ে প্রচার চালানোর পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা ও লার্ভা নিধনের জন্য পরিকল্পিত বাজেটের বাইরে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা মঞ্জুর করল রাজ্য সরকার। এর মধ্যে রাজ্যে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা উত্তর ২৪ পরগনার জন্য বরাদ্দই (৬২ লক্ষ) সবচেয়ে বেশি।
দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি প্রতি বছরেই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার উৎপাত রাজ্যে বেশি হয়। কিন্তু গত বছর সব হিসাব ছাপিয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। দেখা গিয়েছিল, সারা বছরে গোটা দেশে যে ২.৩৩ লক্ষ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার রোগী এ রাজ্যেরই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। একই ছবি দেখা গিয়েছে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও। সারা দেশে ১.৭৪ লক্ষ মানুষ ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ২০২২-এ।
অর্থাৎ একটা বিষয় স্পষ্ট, সারা দেশের ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ বা তার বেশি আক্রান্ত এ রাজ্যেরই। এবং ২০২১-এ এই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজ্য দু’টিই ছিল প্রথম স্থানে। স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছরেও এমন ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মশাবাহিত রোগের মরসুম এখনও শুরুই হয়নি। অথচ জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত যত মানুষ এ বছর ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেই সংখ্যাটা গত বছরের একই সময়কালের চেয়ে বেশি। চলতি বছর ১১ মে পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে ১২৯৩ জন (কলকাতায় ৯১) ও ম্যালেরিয়ায় ৩৬৭৮ জন (কলকাতায় ৩৮২) আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর রাজ্যে এই সময়কালে সংখ্যাটা যথাক্রমে হাজার ও আড়াই হাজার টপকায়নি।
তাই এ বছর স্বাস্থ্য দপ্তর আরও সতর্ক। একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত শহরাঞ্চলে ১২ দফায় বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা ও ১৭ দফায় লার্ভা নিধনের কাজ করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে এই কাজগুলিই নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে করতে হবে। তার জন্য ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে নানা বৈঠক ও সচেতনতা প্রচারে।