ভোট নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ বাবদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার হিসাব পাঠাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন, নির্বাচনের দিন, গণনার দিন রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিংসা রুখতে যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদেরই তির্যক মন্তব্য, এই ‘ল্যাজে-গোবরে’ অবস্থার মধ্যে অবশ্য টাকার হিসাব পাঠাতে দেরি করেনি কমিশন। তা ছাড়া আদালতের নির্দেশে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে রয়ে গিয়েছে। ফলে, যে হিসাব কেন্দ্রকে পাঠানো হয়েছে,তার পরে আরও খরচ হওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, দিন দশেক পরে পুরো খরচ একসঙ্গে পাঠানো যেত না?
সূত্রের খবর, কিছু দিন আগেই নাকি এই টাকা চেয়ে মন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, আদালতের রায় ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে হবে পঞ্চায়েত ভোটে। কিন্তু কোনও খরচ রাজ্যের থেকে চাইতে পারবে না কেন্দ্র। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আদালতের সেই নির্দেশের পরে এই মুহূর্তে কমবেশি প্রায় ৭০০ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পৌঁছেছে। এক-একটি কোম্পানিতে কমবেশি ১০০ জন করে ধরলে প্রায় ৭০ হাজার জওয়ান এখন রয়েছেন রাজ্যে। তাঁদের থাকা-খাওয়া, গাড়ি, গাড়ির তেল ইত্যাদি নানা খাতে খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে। সেই বাবদই প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার বিল পাঠানো হয়েছে মন্ত্রকের কাছে।
আধিকারিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রস্তুতি পর্বেই রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল, নিখুঁত ভাবে হিসাব তৈরি করতে হবে। ভোট মিটলে সেই হিসাব কষে তা পাঠানো হবে কেন্দ্রের কাছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, ভোটের পরে আরও ১০ দিন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থাকার কথা কেন্দ্রীয় বাহিনীর। ফলে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার পরেও আরও বেশ কিছু পরিমাণ অর্থ খরচের আওতায় ঢুকতে পারে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে কেন্দ্রের থেকে বকেয়া বাবদ বিপুল টাকা আটকে থাকার অভিযোগ করে আসছে শাসকদল তৃণমূল। কিছু দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, অতীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য প্রায় ১৮৫২ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে রাজ্য। জরিমানা সমেত ওই অর্থ তারা চেয়েছিল রাজ্যের কাছে। যদিও রাজ্যের দাবি ছিল, রাজ্য নিজে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় না। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে বাহিনী পাঠানো হয় পশ্চিমবঙ্গে। ফলে খরচের বিষয়টা তাদেরই দেখা উচিত।