সাড়া দিল না রাজ্য সরকার! জুনিয়রদের সমর্থনে এ বার ‘গণইস্তফা’ কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়রদেরও

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মঙ্গলবার ‘গণইস্তফার’ পথে হেঁটেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক। বুধবার একই ভাবে ‘গণইস্তফা’ দিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ৭০ জন সিনিয়র। মঙ্গলবারই তাঁরা রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জুনিয়রদের দাবি পূরণ না হলে, তাঁরাও ‘গণইস্তফা’ দেবেন।

কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও রাজ্য সরকারের তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়েই ‘গণইস্তফা’ দিচ্ছেন। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে ‘গণইস্তফা’ দেন মোট ৭০ জন সিনিয়র চিকিৎসক। স্লোগান ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। সিনিয়রেরা যখন ‘গণইস্তফা’ দিয়ে বেরিয়ে আসছেন, তখন মশাল জ্বালিয়ে তাঁদের অভিবাদন জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। চিকিৎসকদের তরফে বলা হচ্ছে, এটা ‘অঙ্গীকারের মশাল’।

পর পর দু’দিন শহরের দুই মেডিক্যাল কলেজের ১২০ জন সিনিয়র ডাক্তার ‘গণইস্তফা’ দেওয়ায় নবান্নের উপর চাপ বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, এটা কোনও ইস্তফাই নয়। কোনও সরকারি কর্মী এই ভাবে ইস্তফা দিতে পারেন না। তার আলাদা প্রক্রিয়া রয়েছে।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস’ ফ্রন্ট’-এর সাত জন প্রতিনিধি ১০ দফা দাবিতে আমরণ অনশন করছেন ধর্মতলায়। গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। প্রথমে ছ’জন অনশনে বসেছিলেন। পরে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোও যোগ দেন আমরণ অনশন কর্মসূচিতে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিদাওয়াগুলিকে শুরু থেকেই সমর্থন জানিয়ে এসেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির সময়ে রোগীর চাপ সামাল দিয়েছেন তাঁরাই। প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত সময় কাজ করেছেন। সিনিয়রদের পরামর্শেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আন্দোলনের অন্য পন্থা খুঁজতে আলোচনা করেছেন জুনিয়রেরা।

ধর্মতলায় অনশনকারীদের পাশেও প্রতীকী অনশনে বসতে দেখা গিয়েছে সিনিয়র ডাক্তারদের। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন সিনিয়র চিকিৎসক কেউ ১২ ঘণ্টা, কেউ ২৪ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে শামিল হয়েছেন। মঙ্গলেও তার অন্যথা হয়নি। এরই মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতির বার্তা দিতে ‘গণইস্তফা’র হুঙ্কার আরজি করের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সিনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে। প্রথম শুরু হয়েছিল আরজি কর থেকে। এ বার তা ছড়িয়ে পড়ল কলকাতা মেডিক্যালেও।

অনেকের আশঙ্কা, একসঙ্গে সিনিয়র চিকিৎসকেরা ‘গণইস্তফা’ দিলে রাজ্যের স্বাস্থ্য কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। সেই আবহে মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। ছিলেন জেলার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের সুপার, আধিকারিকেরা।

ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছেন আরজি করের সিনিয়র ডাক্তারেরাও। জুনিয়রদের দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত স্তরেও ইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। সোমবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যসচিব। সেই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, ১০ তারিখের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলির উন্নয়ন এবং সংস্কারমূলক সব কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়ে যাবে। সিসি ক্যামেরা বসানো থেকে ডিউটি রুম, শৌচাগার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ— চিকিৎসকদের দাবির মধ্যে যেগুলি আছে, তার সবই প্রায় শেষের পথে। মুখ্যসচিবের সেই কাজের খতিয়ান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘কাজের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্দিহান।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.