ঘড়ির কাঁটায় ৫টা ৩৬ মিনিট। ভোরের আলো ফুটলেও তখনও ঘুম ভাঙেনি রাজধানীর। আচমকা কেঁপে উঠল মাটি। মনে হল যেন, মাটির নীচ দিয়ে হেঁটে চলেছে কোনও দানব! কম্পনের তীব্রতা বুঝে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন দিল্লির মানুষ। সকলের চোখেমুখে আতঙ্ক। পরে জানা গেল, ভূমিকম্প হয়েছে। তবে রিখটার স্কেলে তার মাত্রা মাত্র ৪। কেন ৪ মাত্রায় এত কম্পন? প্রশ্ন ঘুরছে সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে। সোমবার ভোরের অভিজ্ঞতা সকলে নিজের মতো করে বর্ণনা করছেন। অনেকেই একটি বিষয়ে একমত, তাঁরা ভেবেছিলেন এই কম্পনের মাত্রা অন্তত ৬ বা তার বেশি হবে।
জাতীয় ভূকম্পনকেন্দ্র বা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল দক্ষিণ দিল্লির ধৌলাকুঁয়া। সেখানে দুর্গাবাই দেশমুখ কলেজ অফ স্পেশ্যাল এডুকেশনের জমির ঠিক নীচে ভূমিকম্প হয়েছে। মাটি থেকে তার গভীরতা খুব বেশি নয়, মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজধানীর এই অংশটি বরাবর ভূমিকম্পপ্রবণ। কাছাকাছি একটি লেক রয়েছে। প্রতি দুই থেকে তিন বছর অন্তর অন্তর এই লেকের ধারে স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হতে দেখা গিয়েছে। তবে শেষ বার এই অংশে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৩.৩।
ভূমি থেকে কম্পনের উৎসস্থলের গভীরতা খুব বেশি নয় বলেই তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়েছে, মত বিশেষজ্ঞদের। সোমবার সকালে ভূমিকম্পের পর সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি লিখেছেন, ‘‘দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। সকলের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা শান্ত থাকুন। ভূমিকম্পের আফ্টারশক হতে পারে, তার জন্য সতর্ক থাকুন। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’’
ভূমিকম্পের মুহূর্তের ছবি বা ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অনেকে। কেউ দেখিয়েছেন ঘরের মধ্যে বন্ধ পাখা কী ভাবে দুলছে। কেউ আবার রাস্তা থেকে কম্পনের ভিডিয়ো করেছেন। ভাইরাল এই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। দিল্লির এক বাসিন্দা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এটা ৪? আরও বেশি মাত্রার কম্পন বলে মনে হল আমাদের। বাড়ির উপরের তলায় থাকলে কি বেশি কম্পন টের পাওয়া যায়?’’ আর এক জন লিখেছেন, ‘‘এই প্রথম বার অ্যালার্ম ঘড়ির সাহায্য ছাড়াই ঘুম ভেঙে গেল!’’ এক জন লিখেছেন, ‘‘প্রচণ্ড জোরে ভূমিকম্প হল। মনে হল যেন, ঘরের নীচ দিয়ে গডজ়িলা (কাল্পনিক দানব) হেঁটে যাচ্ছে।’’ কম্পন অনুভূত হয়েছে গাজ়িয়াবাদেও। বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, এই ধরনের কম্পন এর আগে কখনও তাঁরা অনুভব করেননি।