শাহি সভায় শিশিরের শব্দ, একই মঞ্চে তিন অধিকারী, কনিষ্ঠ পুত্রের প্রচারে মধ্যম পুত্রের সঙ্গে পিতা প্রথম বার

বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীর প্রচারে বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সেই সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কাঁথির বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ তথা সৌমেন্দুর পিতা শিশির অধিকারী। শুধু উপস্থিতই থাকলেন না, বক্তৃতাও করলেন তিনি। আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সৌমেন্দুর পাশাপাশি ওই সভাতে পিতার সঙ্গে মঞ্চে হাজির ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এই প্রথম বিজেপির মঞ্চে একসঙ্গে দেখা গেল তিন অধিকারীকে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রথম প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, কাঁথিতে পদ্ম প্রতীক পেয়েছেন বিরোধী দলনেতার ছোট ভাই সৌমেন্দু। সে দিনই শিশির জানিয়েছিলেন, ছোট ছেলের হয়ে প্রচারে নামবেন তিনি। প্রথম থেকেই বিদায়ী সাংসদ শিশির নিজের আসনে সৌমেন্দুর হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন। বুধবারও কাঁথিতে বিজেপির জনসভায় প্রথম থেকে উপস্থিত ছিলেন শিশির। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মঞ্চে নিয়ে ওঠেন শুভেন্দু। সেই সময় শাহকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান শিশির। করজোড়ে প্রণাম করে কাঁথিতে শাহকে স্বাগত জানান তিনি। সৌমেন্দুকে বিজেপির যুবনেতা অ্যাখ্যা দিয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী করার কথা বলার পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে শিশির-পুত্র শুভেন্দুর লড়াইকে যখন কুর্নিশ করেন শাহ, তখন মঞ্চে বসে হাততালি দিতে দেখা যায় শিশিরকে।

নীলবাড়ির লড়াইয়ে ২০২১ সালেও শাহের সভায় দেখা গিয়েছিল শিশিরকে। সে বছরের ১ মার্চ এগরার জনসভায় শাহের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিয়ে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। যদিও সে দিন পদ্ম প্রতীকের পতাকা হাতে তুলে নেননি। বুধবারের সভায় বিজেপির পতাকা হাতে তুলে না-নিলেও গেরুয়া রঙের উত্তরীয় পরে সারা ক্ষণ মঞ্চে থেকেছেন তিনি। রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, শিশির সরাসরি পদ্মশিবিরে যোগ না-দিলেও, ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের সভায় যে দিন শাহের হাত ধরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, সে দিনই কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’ তৃণমূলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল। শিশির সরাসরি বিজেপিতে যোগ না দিলেও, তিনি যে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। এগরায় বিজেপির প্রচারসভায় শিশিরের উপস্থিতির প্রমাণ তুলে ধরে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে কাঁথির সাংসদ পদ খারিজের আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সেই আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই শিশিরের দলবদল নিয়ে আর কোনও মাথাব্যথা নেই বাংলার শাসকদলের।

শুভেন্দুর দলবদলের কয়েক দিনের মধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন সৌমেন্দু। দলের সঙ্গে ছিন্নসম্পর্ক তমলুকের বিদায়ী সাংসদ তথা শিশিরের তৃতীয় পুত্র দিব্যেন্দুও সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.