স্বস্তিতে রাজ্যের কয়েক হাজার ডিএলএড পড়ুয়া। টেটে বসার জন্য এই দু’বছরের আবশ্যিক প্রশিক্ষণ (ডিএলএড) কোর্সে অবশেষে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারবেন তাঁরা। ওই পরীক্ষা নিয়ে নানা রকম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, অল্প সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েও কিছু ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আর তা হচ্ছে সম্ভবত অর্থের বিনিময়ে। এই বিতর্কের জেরেই থমকে গিয়েছিল ডিএলএড পড়ুয়াদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সেই অনিশ্চয়তা কাটাল। হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ডিএলএড-এর প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় বসার জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে পরীক্ষায় বসার জন্য কিছু শর্ত মানতে হবে ডিএলএড পড়ুয়াদের।
মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে। তবে হাই কোর্ট একই সঙ্গে জানিয়েছে, যে সমস্ত পড়ুয়া ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়ম মেনে ক্লাস করছেন তাঁরাই পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। আর এই সব তথ্য খতিয়ে দেখে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে পর্ষদকে। তার পরেই তারা পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারবে।
মঙ্গলবার হাই কোর্ট জানিয়েছে, তথ্য যাচাইয়ের জন্য এক মাস সময় পাবে পর্ষদ। আর রাজ্যের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি ডিএলএড কলেজকে পড়ুয়াদের হাজিরা এবং ক্লাসের বিবরণ-সহ তথ্য পর্ষদের কাছে জমা দিতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। উল্লেখ করতে হবে ক্লাসে পড়ুয়াদের হাজিরার শতাংশ। যে সব পড়ুয়ার হাজিরা কম, তাঁরা পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। যাঁরা এনসিটিই-র নিয়ম মেনে ক্লাসে হাজিরা দিয়েছেন, একমাত্র তাঁরাই পরীক্ষার সুযোগ পাবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট।
এনসিটিই-র নিয়ম কী, তা অবশ্য আগেই হাই কোর্টকে জানিয়েছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ডিএলএড ভর্তিতে নিয়ম মানা হয়নি এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন সুকান্ত গুড়িয়া নামে এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০২১-২৩ শিক্ষাবর্ষে ডিএলএড কোর্সে ভর্তির শেষ দিন ছিল ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। সেই সময় অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু তার পর নিয়ম না মেনে ক্লাস শুরুর ৪-৫ মাস পরে অনেক অফলাইনে বেসরকারি কলেজ ভর্তি নেয়। এর পর গত বছর ২২ ডিসেম্বর পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, অফলাইনে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত (এনরোল) হয়নি। পড়ুয়া পিছু ৩ হাজার টাকা করে দিয়ে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। তার পরই শুরু হবে পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, পরে এসেও এই পড়ুয়ারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাচ্ছেন কী করে। বিকাশ আদালতকে বলেছিলেন, ‘‘অক্টোবর ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন-এর সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, পড়ুয়া ভর্তির দিন থেকে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০টি এবং সপ্তাহে ন্যূনতম ৩৬ ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের। এ ক্ষেত্রে পরে যাঁদের ভর্তি করা হয়েছে তাঁরা সম্পূর্ণ ক্লাস করেননি। এই অবস্থায় তাঁরা পরীক্ষার সুযোগ পেলে শিক্ষাসমাজে খারাপ বার্তা যাবে। শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও ক্ষতিকর।’’
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের যুক্তি ছিল, ‘‘একটি শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে পিছনের দরজা দিয়ে পড়ুয়া ভর্তির পিছনে আর্থিক বিষয় কাজ করে থাকতে পারে। তা ছাড়া মাঝপথে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা ক্লাস সম্পূর্ণ করেননি। এতে অর্ধ-প্রশিক্ষিতরা শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন।’’ মঙ্গলবার সেই মামলাতেই ডিএলএড পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়েছে কি না দেখে রেজিস্ট্রেশন করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, টেট দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের জন্য এই ডিএলএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ডিএলএড কোর্সের মেয়াদ দু’বছর। কোনও পড়ুয়া এক বছর পরীক্ষায় অসফল হলে বা পরীক্ষা দিতে না পারলে সর্বোচ্চ ৩ বছর সুযোগ পান এই কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য।