কারচুপির অভিযোগ থেকে অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি! নজর অনিশ্চিত প্রদেশে, মঙ্গলে আমেরিকায় ভোট

রাত পোহালেই ভোটদেবে আমেরিকা।

আজ, সোমবার, ভোটের ঠিক আগের দিন, দুই প্রার্থীই প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন, যতটা সম্ভব ‘সুইং স্টেট’ বা অনিশ্চিত প্রদেশের ভোটারদের কাছে পৌঁছনো যায়। কারণ এই সব ‘সুইং স্টেট’-ই শেষ পর্যন্ত ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে অনুমান নির্বাচনী বিশ্লেষকদের। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারসভা করছেন নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া এবং মিশিগানে। আর কমলা হ্যারিস রয়েছেন ফিলাডেলফিয়ায়, লেডি গাগা এবং ওপ্রা উইনফ্রি-কে নিয়ে তাঁর চমকদার শেষ প্রচারসভায়।

দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলায় সেই অনুযোগের সেই পুরনো ও চড়া সুর— ‘যেন-তেন প্রকারে জিততে চায় ডেমোক্র্যাটেরা। এ বারেও তারা ভোটে কারচুপি করছে’। অন্য দিকে, ভোটারদের উদ্দেশে দেশের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের আশ্বাস-বার্তা— ‘আপনার বক্তব্য, আপনার ইচ্ছেকে স্বীকৃতি দিতে আমেরিকাকে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের হাতে তুলে দিন’। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থীর মধ্যে যে জমিন-আসমান ফারাক, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তাঁদের এই শেষ লগ্নের প্রচার।

নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী প্রত্যাশা এবং সংশয় দু’টোই জাগিয়ে তুলছে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালান লিচম্যান যেমন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছেন যে, কমলা হ্যারিস-ই জয়ী হবেন। আমেরিকার ঐতিহাসিক প্রবণতা, অর্থনৈতিক কারণ এবং ক্ষমতাসীন দলের অবস্থা বিশ্লেষণ করে গত ১০টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে ৯টির ফলাফলের সফল পূর্বাভাস দিয়েছেন এই লিচম্যান। তা ছাড়া, দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের জনমত সমীক্ষাতেও ইঙ্গিত, হোয়াইট হাউসে আসছেন প্রেসিডেন্টের জো বাইডেনের উত্তরসূরি-ই।

ভার্জিনিয়া-নিবাসী, গুজরাত থেকে এ দেশে আসা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী জুনায়েদ শেখের মতে, ‘‘নির্বাচনী দৌড় থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরে যাওয়ার পরে প্রার্থী হওয়া কমলা হ্যারিসের হাতে মাত্র তিন মাস সময় ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তিনিই এ বার জিতে জেতে পারেন। তা হলে আমরা একটি ‘অপ্রত্যাশিত’ জয় দেখতে পাব।’’

কমলা হ্যারিসকে জিততে হলে শুধু নিজের ভিত সুরক্ষিত করলেই হবে না, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অনিশ্চিত ভোটারদেরও আকৃষ্ট করতে হবে, যাঁতে তাঁরা ট্রাম্পের মেরুকরণ-নীতি থেকে সরে আসতে পারেন। মূল্যবৃদ্ধিতে জর্জরিত আমেরিকায় এ বারের নির্বাচনে অর্থনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় ঐক্য, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং যোগ্য নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষার মতো নানা বিষয়ও ভাবাচ্ছে আমেরিকান ভোটারদের। স্বাস্থ্য পরিষেবা, জলবায়ু নীতি এবং প্রজননের উপরেমেয়েদের অধিকার— এই তিনটি বিষয়ে হ্যারিসের অবস্থানের সঙ্গে মিলে গিয়েছে মহিলা এবং তরুণ প্রজন্মের ভাবধারা।

এ ছাড়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন হ্যারিস। অ-শ্বেতাঙ্গ ও মহিলা হিসেবে হ্যারিসের এই ‘দৃশ্যমানতা’ বিভিন্ন বর্ণ, লিঙ্গ ও শ্রেণির ভোটারদের তাঁর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

তা সত্ত্বেও, হ্যারিস একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ট্রাম্পের ভোটব্যাঙ্কের ভিত মূলত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ভোটার ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই ভোটারেরা বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে তাঁদের রুটি-রুজি সুরক্ষিত থাকবে। এই সমর্থন হ্যারিসের জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

বেশির ভাগ জনমত সমীক্ষা সমানে-সমানে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও এখনও পর্যন্ত, স্বল্প ব্যবধানে হলেও, এগিয়ে রেখেছে হ্যারিসকে। ইতিমধ্যেই ৭ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি ভোটার ‘আর্লি ভোটিং’-এর সুবিধা নিয়ে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। যা, দেশের মোট ১৬.৪ কোটি ভোটারের প্রায় অর্ধেক। বাকি ৯ কোটি ভোট দেবেন কাল। ট্রাম্প বা হ্যারিস, যিনিই জিতুন না কেন, ইতিহাস সৃষ্টি হবে। ট্রাম্প হবেন দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি পুনর্নিবাচনে হেরে গিয়েও ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। আর এ দেশে মহিলাদের ভোটাধিকার পাওয়ার ১০৪ বছর পরে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এক অনন্য ইতিহাস গড়বেন কমলা হ্যারিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.