এক দশক আগেও, আলাদা বাজেট বরাদ্দ ছিল রেলের জন্য। আলাদা বাজেটের সেই কৌলীন্য অনেক দিনই হারিয়েছে রেল মন্ত্রক। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, আজ নির্মলা সীতারামনের বাজেটে মন্ত্রক হিসাবে বরাদ্দে এক বার নামও উঠে এল না রেলের। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে প্রায় ফি সপ্তাহে রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকছে দেশ।
তবে রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বারের রেল বাজেটে পরিকাঠামো খাতে খরচ ধরা হয়েছে ২.৬২ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে রেলের সুরক্ষা খাতে। আজ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেন, রেলে ইতিমধ্যেই ৪ হাজার কিলোমিটার পথে কবচ সুরক্ষা ব্যবস্থা বসে গিয়েছে। কবচ সিরিজে ‘কবচ-৪’ ব্যবস্থা দ্রুত বাকি অংশে লাগানো শুরু হবে। এর মাধ্যমে সিগন্যালিং ব্যবস্থা, ইঞ্জিন ও রেল লাইন, স্টেশন এবং নজরদারি ব্যবস্থাকে সামগ্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু কত কিলোমিটার লম্বা রাস্তায় কবচ ব্যবস্থা বসবে, কত টাকা খরচ হবে, কিংবা কত দিনে গোটা দেশের রেল নেটওয়ার্ককে কবচ সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হবে তা নিয়ে নীরব ছিলেন রেলমন্ত্রী।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় সদ্য মারা গিয়েছেন বহু যাত্রী। দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। ফি সপ্তাহে লাইনচ্যুত হচ্ছে ট্রেন। এই আবহে বাজেটে রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি লাইনও না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের কথায়, “অতীতে রেলের নিরাপত্তা কখনও এত খারাপ অবস্থায় ছিল না। অথচ তা নিয়ে একটি কথাও নেই বাজেটে। ঘুরপথে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। যার জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গরিবদের। আমরা গত বারের মতো এ বারেও রেল নিয়ে আলাদা করে বিতর্কের দাবি জানিয়েছি।”
রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে হাই স্পিড ট্রেন চালাতে ওই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত বাজেটে হাই স্পিড খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার কোটি। চলতি বছরে ইঞ্জিন, ওয়াগন ও কামরা তৈরির প্রায় ৫২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা খরচ ধার্য করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবর্ষে রেলের সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে যাত্রিভাড়া খাতে। যার ফলে অপারেটিং রেশিও গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.২২ শতাংশ। যার অর্থ একশো টাকা আয় করতে গিয়ে রেলের প্রায় ৯৮ টাকা ২২ পয়সা খরচ হয়ে যাচ্ছে।