মলদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বড় জয় পেল প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর দল পিপল্স ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। ভারতের সঙ্গে সে দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারল না রবিবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে। অনেকেই বলছেন, মুইজ্জুর চিন-প্রীতির দিকেই ঝুঁকে তাঁর দলকে ভোট দিয়েছেন মলদ্বীপের নাগরিকেরা।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রবিবারের মলদ্বীপের ৯৩ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ভারতীয় সময় রাত ১১টা পর্যন্ত ভোট গণনার ফলাফল থেকে জানা গিয়েছে, প্রথম ৮৬ আসনের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। সেই ৮৬ আসনের মধ্যে ৬৬ আসনেই জয় পেয়েছে মুইজ্জুর দল। যা জাদুসংখ্যার থেকে অনেকটাই বেশি। রবিবারের নির্বাচনে মুইজ্জুর দলের সঙ্গে মূলত লড়াই ছিল সে দেশের মলডিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-র। ফলাফল থেকেই স্পষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচনে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি এমডিপি।
মলদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব ছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। বিশ্বের অনেক দেশের নজর ছিল এই নির্বাচনের দিকে। গত সেপ্টেম্বরেই সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুইজ্জু। কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে সোলির দল এমডিপি। ফলে পার্লামেন্টের ‘বাধায়’ বহু সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে পারেনি মুইজ্জুর সরকার। তাই এই ভোটে জিতে তারা মলদ্বীপের পার্লামেন্টেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেয়েছিল।
কূটনৈতিক মহলের কথায়, এই নির্বাচন মূলত দু’টি কারণের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। মুইজ্জুর ‘ভারত বিরোধী অবস্থান’ এবং ‘চিন ঘেঁষা নীতি’ মলদ্বীপের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা পরখ করার একটা পরিসর তৈরি করছিল এই নির্বাচন।
ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপ সরকারের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতি ঘটেছে এই কয়েক মাসে। মুইজ্জু চিনপন্থী এবং ভারত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল মুইজ্জুর তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার পর ভারতের সমাজমাধ্যমে মলদ্বীপ বয়কটের ডাক ওঠে। অনেকেই মলদ্বীপে যাওয়ার টিকিট বাতিল করে দেন। যার ফলে দেশটি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ইতিমধ্যে চিনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন মুইজ্জু। এমনকি, মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর নির্দেশও দেন তিনি। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার মলদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই আবহেই এসে পড়ে সে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন। মলদ্বীপের বিরোধী দলগুলি মুইজ্জু সরকারের ভারত বিরোধী অবস্থানের বিরোধিতা করে প্রচারও করে। কিন্তু কোনও কিছুই মইজ্জুর দলের পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারেনি।