চার তলা পেল্লায় বাড়ির মালিক, খণ্ডঘোষে সেই তৃণমূল নেতার স্ত্রীর নাম আবাস যোজনার তালিকায়!

চোখধাঁধানো চার তলা ইমারতের মালিক পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। আবাস যোজনার সদ্য প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে শাসকদলের সেই নেতার স্ত্রীর নাম। শুধু তা-ই নয়, নাম রয়েছে উপপ্রধানের প্রয়াত বাবারও। অথচ, যাঁদের নাম থাকার কথা, এলাকায় যাঁদের মাটির ঘর, নাম নেই তাঁদেরই! যা নিয়ে জোর বিতর্ক দানা বেঁধেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে। উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরাই।

ঘটনাচক্রে, পঞ্চায়েত কর্মীরা আবাস প্রকল্পের যে তালিকা তৈরি করেছিলেন, এখন বাড়ি গিয়ে তারই সমীক্ষা করার সময় বিপুল অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য জুড়ে। গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘যার চার তলা বাড়ি রয়েছে, সে বাংলার বাড়ি পেয়ে গেল, আর যার কিছু নেই, সে পেল না। এটা চলবে না।’’ আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দাবি, সমীক্ষা করতে গিয়ে ঠিক এই ছবিই উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন খণ্ডঘোষের শাঁকারি গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশবপুর গ্রাম। এই বিতর্ক প্রসঙ্গে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেনিয়ম হলে তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে।’’ খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমারের অবশ্য দাবি, ‘‘সব নামই বাতিল করা হয়েছে।’’

অভিযোগ, গরিব হলেও আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ। অথচ, আবাস যোজনার তালিকায় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের স্ত্রী সীমা শেখ, মৃত বাবা শেখ মহসিন, দুই ভাই আমনগীর শেখ এবং আজমগীর শেখের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দা রহমত তুল্লা বলেন, ‘‘আমাদের মাটির বাড়ি। আমরাই বঞ্চিত। অনেকের মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের নামও তালিকায় নেই।’’

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের কাজে ব্যস্ত থাকি। অফিসে খুব একটা যাই না। কে বা কারা তালিকা তৈরি করেছে, আমার জানা নেই। বিষয়টি নজরে আসা মাত্র নাম বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছি।’’ এই ‘অনিয়ম’-এর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে পঞ্চায়েত প্রধান শিউলি খাঁ। জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে আমাকে। জাহাঙ্গির শেখ নিজের ইচ্ছে মতো সব করছেন। এখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গোটাটা জানিয়েছি।’’

অন্য দিকে, প্রকাশ্যে আসা তালিকা পুরনো বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী পাকা বাড়ি থাকলে বা আর্থিক অবস্থা ভাল হলে আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে কী ভুলভ্রান্তি হয়েছে, প্রশাসন তা দেখছে। তালিকাটা তো পুরনো।’’

এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। চার তলা বাড়ির মালিক অথচ, তাঁর নাম আবাস যোজনার তালিকা! আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.