পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে গিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যে থেকে কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। কনস্টেবল নিয়োগে ১০ শতাংশ আসন সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে (তবে তাঁদের পরীক্ষা দিয়েই চাকরি পেতে হবে) বলেও রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কনস্টেবল পদে ১০০টি-র মধ্যে ৪৪টিই খালি পড়ে রয়েছে। গত তিন বছরে ধারাবাহিক ভাবে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলে শূন্য পদের হার বেড়েছে।
আজ টাটা ট্রাস্ট-এর নেতৃত্বে একগুচ্ছ অসরকারি সংস্থা ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২২’ প্রকাশ করেছে। বিচারব্যবস্থার চারটি মাপকাঠি—পুলিশ, জেল, আদালত ও আইনি সাহায্যের নিরিখে রাজ্যগুলি কোথায় দাঁড়িয়ে, তার খতিয়ান রয়েছে রিপোর্টে। সামগ্রিক ভাবে দেশের ১৮টি বড় ও মাঝারি রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ১৭তম স্থানে রয়েছে। পুলিশ, বিচারবিভাগের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে শেষে, ১৮-তম স্থানে রয়েছে।
রিপোর্ট বলছে, রাজ্য পুলিশের ৪৪ শতাংশ কনস্টেবল পদ খালি পড়ে রয়েছে। বড়-মাঝারি রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এই শূন্যপদের হার সবথেকে বেশি। ২০১৯-এর প্রথম রিপোর্টের সময় দেখা গিয়েছিল, প্রায় ৩১ শতাংশ পদ খালি পড়ে রয়েছে। পুলিশের অফিসার পদে চারটির মধ্যে একটি পদ খালি পড়ে রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় থানা পিছু জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৬ হাজারের বেশি। অর্থাৎ গড়ে তিন লক্ষের বেশি মানুষের জন্য একটি থানা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এই মাপকাঠিতেও শেষ সারিতে। কেরলের গ্রামে গড়ে প্রতি ২৫ হাজার মানুষের জন্য একটি করে থানা রয়েছে। রাজ্যের শহরাঞ্চলে একটি থানার উপর গড়ে ১ লক্ষ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ নির্ভরশীল।
আদালত বা বিচারবিভাগের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে থাকার জন্য এর পিছনে রাজ্যের কম খরচকেই দায়ী করছে রিপোর্ট। কারণ, রাজ্যে বিচারব্যবস্থার পিছনে জনসংখ্যার মাথা পিছু মাত্র ৭৫ টাকা খরচ হয়। বড়-মাঝারি রাজ্যগুলির মধ্যে যা সবথেকে কম। হরিয়ানায় খরচ হয় সবথেকে বেশি, ২৭০ টাকা।
হাই কোর্টে কর্মীদের মধ্যে ৩১ শতাংশের বেশি পদ খালি পড়ে রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে মোট ঝুলে থাকা মামলার মধ্যে ১০ বছরের বেশি পুরনো মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। নিম্ন আদালতে ১০ বছরের পুরনো মামলার হার প্রায় ২০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গের হাল সবথেকে খারাপ।