ভারতে মাওবাদী উপদ্রুত জেলার সংখ্যা এখন মাত্র তিন! বুধবার এই দাবি করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদীদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিয়েছেন, তা পূরণ হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই নর্থ ব্লকের দাবি। উল্লসিত শাহ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এটি এক ঐতিহাসিক সাফল্য।’’ তিনি জানিয়েছেন, মাওবাদী মুক্ত ভারত এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, এখন কেবলমাত্র ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশনের তিনটি জেলা— সুকমা, বিজাপুর এবং নারায়ণপুরই ‘অতি প্রভাবিত’। এ ছাড়া রয়েছে ১১টি ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ জেলা। ঘটনাচক্রে, বুধবারই সুকমায় নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-র মোট ২৭ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। এঁদের মধ্যে মাওবাদীদের সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র ১৬ জনের মাথার দাম ছিল ৫০ লক্ষ টাকা। পাশের জেলা কাঁকেরে আত্মসমর্পণ করেছেন ৫০ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির হাফ ডজন নেতা।
গত এপ্রিলে সংসদের বাজেট অধিবেশন-পর্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছিলেন, রেড করিডোর (‘মাওবাদী মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত এলাকা) ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ২০১৩ সালে ভারতে ১২৬টি জেলা ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ ছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ১৮টিতে। এর মধ্যে ছ’টি ‘অতি প্রভাবিত’ এবং ১১টি ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ জেলা। তার ছ’মাসের মধ্যেই সংখ্যা নেমে এল তিনে! ৬০ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের উপস্থিতিতে গড়ছিরৌলিতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে সোনু। মাওবাদী সংগঠনে ‘তাত্ত্বিক মস্তিষ্ক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই বুধবার বলেন, ‘‘বেণুগোপালের আত্মসমর্পণ মাওবাদীদের শেষের শুরু।’’ ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশার মতো মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলিতে নকশালপন্থী জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য যে ‘পুনর্বাসন প্যাকেজ’ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে ফল মিলতে শুরু করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের ১০টি রাজ্যের মোট ১০৬টি জেলা ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ বলে চিহ্নিত করেছিল। তার মধ্যে সাতটি রাজ্যের ৩৫টি জেলা ‘অতি প্রভাবিত’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। গত বছরের একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, দেশের ৩৮টি জেলায় এখনও সক্রিয় মাওবাদীরা। তার মধ্যে ছ’টি জেলা ‘অতি প্রভাবিত’।