চাঁদের আকর্ষণবলের আওতায় ঢুকে পড়ার পরেই ঝটপট কক্ষপথও বদলে ফেলল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩। শনিবার মহাকাশযানটিকে সফল ভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। রবিবার রাতেই প্রথম বার কক্ষপথ বদলও করা হয়েছে। এর ফলে বাইরের দিকের কক্ষপথ থেকে আরও এক ধাপ ভিতরের কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩। ইসরো জানিয়েছে, চাঁদ থেকে এই মুহূর্তে চন্দ্রযানের দূরত্ব মাত্র ৪,৩১৩ কিমি।
রবিবার রাতে ইসরোর তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, চাঁদের ‘দেশে’ চন্দ্রযান-৩-এর প্রথম বারের কক্ষপথ পরিবর্তন সফল হয়েছে। চাঁদের আরও কাছে পৌঁছে গিয়েছে মহাকাশযানটি। সেটি বর্তমানে ১৭০ কিমি X ৪১৩১ কিমি কক্ষপথে অবস্থান করছে (অর্থাৎ, চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে প্রথম যে অবস্থানে ছিল চন্দ্রযান-৩, তার চেয়ে ১৭০ দূরে এগিয়েছে সেটি। চাঁদে পৌঁছতে আরও ৪,৩১৩ কিমি পাড়ি দিতে হবে)। ওই কক্ষপথে চাঁদের চারপাশে পাক খাচ্ছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩।
ধাপে ধাপে এমনই কয়েক বার কক্ষপথ পরিবর্তন করে চাঁদে পৌঁছবে চন্দ্রযান-৩। মোট পাঁচ বার কক্ষপথ পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। বেঙ্গালুরু অফিসে বসে বিজ্ঞানীরা মহাকাশযানটিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইসরো জানিয়েছে, পরবর্তী কক্ষপথ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি হবে আগামী ৯ অগস্ট দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যে।
ইতিমধ্যে চাঁদের কক্ষপথ থেকে প্রথম ছবিও পাঠিয়ে ফেলেছে চন্দ্রযান-৩। রবিবার রাতে একটি ভিডিয়ো টুইট করে সেই ছবি প্রকাশ করেছে ইসরো। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, চারদিকে অন্ধকার। তার মধ্যে ধূসর রঙের গোলক। চন্দ্রপৃষ্ঠের এবড়োখেবড়ো অংশ ধরা পড়েছে ছবিতে। দেখে মনে হয়েছে যেন, চাঁদের একেবারে গা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে ভারতীয় মহাকাশযান।
গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল ‘চন্দ্রযান-৩’-এর। এখনও পর্যন্ত মোট যাত্রাপথের দুই তৃতীয়াংশ অতিক্রম করেছে সে। উৎক্ষেপণের ২২ দিন পর চন্দ্রযান-৩ পৌঁছেছে চাঁদের কক্ষপথে। এর আগে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীর কক্ষপথেই ঘুরছিল মহাকাশযানটি।
এটি ইসরোর চাঁদে মানুষহীন অভিযানগুলির মধ্যে তৃতীয়। এর আগেও দু’বার চন্দ্রযানকে সফল ভাবে চাঁদের কক্ষপথে পাঠিয়েছিল ভারতীয় সংস্থা। কিন্তু চাঁদের মাটি এখনও ছুঁতে পারেনি। চন্দ্রযান-৩-এর পক্ষে সবচেয়ে কঠিন পর্যায়টি এখনও অপেক্ষা করে আছে। আগামী ২৩ অগস্ট বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে ‘পাখির পালকের মতো অবতরণ’ (সফট ল্যান্ডিং) করার কথা চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের। চার বছর আগে ঠিক ওই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের। সেই অভিযান যদি সফল হয়, তবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা পাবে। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে মহাকাশযান সফল ভাবে চাঁদে অবতরণ করানোর তালিকায় উঠে আসবে ভারত।