বাঙালি পরিবারের হিন্দু গৃহবধূদের প্রচলিত এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে মহিষাদলের মল্লিক পরিবার। আজ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে ধান দূর্বা সহযোগে শঙ্খধ্বনি’র মধ্যে দিয়ে বড়ির বিয়ের উপাচার সম্পন্ন হয়েছে।
নতুন ওঠা বিউলির ডাল ও চালকুমড়ো বেটে বড়ি দেওয়ার এই প্রচলন রয়েছে রাঢ বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগণা জেলায় এমন রীতির প্রচলন দেখতে পাওয়া যায় সুপ্রাচীন কাল থেকে। অনেক জায়গাতেই আবার এই পরম্পরা ‘বুড়োবুড়ির’ বিয়ে নামেও পরিচিত। মহিষাদলের মল্লিক পরিবারের কত্রী মণিকা মল্লিক বংশ পরম্পরায় মেনে চলেছেন এই রীতি।
এদিন নতুন বস্ত্র পরিহিতা গৃহবধূ বানিয়ে ফেলেন দুটি বড় আকারের বড়ি। এরা বর ও কনে। এরপর থাকে আরও কয়েকটি ছোট বড়ি জাদের আবার ত্রয়োস্ত্রী বলে অভিহিত করা হয়। বর কনের চারপাশে ত্রয়োদের বসিয়ে শুরু হয়ে বিয়ের পর্ব। বরের মাথায় টোপরের পরিবর্তে চাপানো হয় দূর্বা ঘাস আর কনের মাথায় দেওয়া হয় তুলসি পাতার ঘোমটা। এরপর ধানদূর্বা ছড়িয়ে শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান।
এক সময়ের মহিষাদল রাজবাড়ির স্বর্ণকার এই মল্লিক পরিবারের বছর ষাট-এর গৃহবধূ মণিকা জানান, “বিয়ের পর থেকেই দেখে এসেছি দাদি শ্বাশুড়িকে এই প্রথা মেনে বড়ির বিয়ে দিতে। এরপর শ্বাশুড়িকেও দেখেছি। এখন ওঁরা আর নেই। তবে ওদের দেখানো পথে প্রতি বছর নিয়ম করে বড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। মঙ্গল কামনা করি সকলের”।
তিনি আরও জানান, “আজকের দিন থেকে শুরু হয় শুভ কাজের সূচনা। এই দিনটির পর থেকেই মহিষাদলের ঘরে ঘরে বড়ি দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে যায়। এরপর অত্যন্ত হালকা ও সুস্বাদু এই বড়ি ছড়িয়ে পড়ে বাংলার ঘরে ঘরে”।