‘কাটমানি’ নেওয়া নেতা সন্দেশখালিতে ঘুরে ঘুরে তালিকা করছেন বিক্ষুব্ধদের, রুষ্ট জনতা

তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত? সন্দেশখালি পঞ্চায়েতে উপপ্রধান গণেশ হালদার ও তাঁর অনুগামীদের এলাকায় ঘুরে ঘুরে ক্ষুব্ধদের তালিকা করতে দেখে এমনই আলোচনা করছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, শিবপ্রসাদ হাজরার অনুগামী গণেশের বিরুদ্ধেই তো প্রচুর নালিশ রয়েছে। তাঁকে দিয়ে কী ভাবে লিজ়ের টাকা না-পাওয়ার তালিকা করানো হচ্ছে? গণেশের অবশ্য হেলদোল নেই। তিনি তালিকা তৈরির মাঝেই আশ্বাস দিচ্ছেন টাকা ফেরানোরও।

তৃণমূল নেতা গণেশ এই এলাকায় তিন বারের পঞ্চায়েত সদস্য। গ্রামবাসীদের দাবি, এলাকার গরিব মানুষের থেকে গণেশ যা টাকা তুলতেন, তার ভাগ যেত শিবপ্রসাদ, শেখ শাহজাহানের কাছেও। এই এলাকায় গণেশ খাস জমি দখল করে ভেড়ি বানিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাঁদের। গণেশের নিজের বুথ এলাকা ৫ ঘটি পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকের বক্তব্য, ‘‘যাঁর বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগ, তিনিই পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে এলাকার মানুষের কাছ থেকে জমি লিজ় সংক্রান্ত অভিযোগ শুনছেন!’’

রুমা মণ্ডল নামে এই এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘গণেশ আমাদের পাট্টা করিয়ে দেবে বলে ৭০০ টাকা নিয়েছিলেন দু’বছর আগে। কিন্তু টাকা ফেরত দেননি, কাজও হয়নি। উনিই আবার জমির সমস্যা সমাধানে বেরিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে কী হবে।’’ রুমার মতো অনেকের অভিযোগ, চারশো, পাঁচশো করে যখন যেমন খুশি টাকা নিয়েছেন গণেশ। গণেশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহর আরও বড় বলে জানিয়েছেন নমিতা মণ্ডল-সহ বেশ কয়েক জন। নমিতার দাবি, ‘‘গণেশ তাঁর দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে এই গ্রামের বহু লোকের একশো দিনের কাজের টাকা তুলে নেন। আমার পরিবারেই ছ’জন একশো দিনের কাজ করেছিলেন। তিন জনের ব্যাঙ্ক একাউন্টে তিন হাজার টাকা করে ঢুকেছিল প্রায় দু’বছর আগে। গণেশের লোক এসে বলে যায়, নয় হাজারের মধ্যে দেড় হাজার রেখে সাড়ে আট হাজার টাকা দিয়ে দিতে হবে। তাই করতে হয়। কাটমানি নেওয়া নেতা টাকা ফেরানোর আশ্বাস দেন কী করে!’’ শিবপদ কাণ্ডারের অভিযোগ, তিনি একশো দিনের কাজ করেছিলেন প্রায় ৩৭ দিন। দু’বছর আগে একবার ৫,৭০০ টাকা ঢুকেছিল। তিনি বলেন, ‘‘গণেশ চাপ দিয়ে সব টাকা তুলে নেন। ওদের কথা না শুনলে, মিটিং-মিছিলে না গেলে কোদালের বাঁট দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হত। ভয়ে ওদের কথা শুনতে হত।’’ রিঙ্কু নস্কর নামে এক তরুণী বলেন, ‘‘স্বামী শ্যামল নস্করকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এক রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় গণেশের লোকজন। এরপর ত্রিমণীতে শিবপ্রসাদদের দলীয় কার্যালয়ে মারধর করে। এখনও হাতে যন্ত্রণা হয়।’’

গণেশ অবশ্য অভিযোগের কথা মানতেই চাননি। তিনি বলেন, ‘‘সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার সামনে এমন অভিযোগ কেউ করুন তো!’’ এর মধ্যেও প্রচ্ছন্ন হুমকির সুর আছে, দাবি স্থানীয়দের। সন্দেশখালির বিধায়ক তৃণমূলের সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘যার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, সব শোনার জন্য নেতারা যাচ্ছেন। এত দিন কেউ তো কিছু বলেনি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.