হাতে গোনা আর মাত্র ক’টা মাস, তার পরেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই আবার “এক দেশ এক ভোট” নীতি নিয়ে পদক্ষেপ করার পক্ষে আলোচনা শুরু করল মোদী সরকার। রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ওই নীতি কার্যকরের দিকগুলি খতিয়ে দেখার জন্য আইন কমিশনের কাছে প্রস্তাব গেছে।
এক দেশ এক ভোট নীতি কার্যকর করার পক্ষে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই নীতি কার্যকর হলে বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে। সেই অর্থ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রচারে ব্যয় করা যাবে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই নীতি কার্যকর হলে, উন্নয়নমূলক প্রকল্পের গতিও বাড়বে।
লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট একসাথে করার পক্ষে সরকার যে যুক্তি দিয়েছে সেটা হলো, এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। একটা ভোটার তালিকাতেই দুটি নির্বাচন হলে সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরীর কাজের চাপও কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বারবার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশন আগেই এই ভাবনাকে সমর্থন করেছে।
২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর হয়েই মোদী এক দেশ এক ভোট করার কথা তুলে ধরে ছিলেন। কিন্তু একাধিক বিরোধীদল এক দেশ এক ভোট পদ্ধতির সমালোচনায় শুরু করে দেয়। তাদের মতে এই নীতির মাধ্যমে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। তাদের দাবি, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী। বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, “এক দেশ এক ভোট” নীতি কার্যকর হলে লোকসভার স্রোতেই বিধানসভাও ভেসে যাবে। এরফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচন ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা থাকে বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে।
একই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এক ভোট ব্যবস্থা চালুর পর কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগে নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে কী হবে? বিরোধীদের আশঙ্কা এরপর রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকেও ক্ষমতাহীন করে পঞ্চায়েত পৌরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
এই নীতি চালু করতে সংবিধানের বেশ কিছু অনুচ্ছেদ বদলের প্রয়োজন হতে পারে বলেও খবর। ৮৩ নম্বর অনুচ্ছেদে সংসদের দুই কক্ষের মেয়াদের কথা বলা হয়েছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদের লোকসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিবদ্ধ রয়েছে। ১৭২ নম্বরে রয়েছে রাজ্য বিধানসভা গুলির মেয়াদের কথা। ১৭৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিভুক্ত রয়েছে। ৩৫৬ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সংক্রান্ত বিধি রয়েছে । ১৯৫১ সালের ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনেও কিছু সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।