গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড.অচিন্ত্য বিশ্বাসের এই অসামান্য লেখাটি সবার সঙ্গে শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না। আমি ধন্য স্যারের আশীর্বাদ পেয়ে….
হিরণ্যগর্ভ ঊষার মত
অচিন্ত্য বিশ্বাস
‘A Journey to Orakandi’ এই বই সবাই দেখননি। পাদরি মীড সস্ত্রীক গিয়েছিলেন, ফরিদপুর ওড়াকান্দি-তে। ইচ্ছা ছিল মতুয়া সমাজের প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনের গতিমুখ খৃস্টিয়ান সদাপ্রভুর দিকে ঘুরিয়ে দেবেন। Anglican Church তাঁদের সাহায্যের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেনি।
মতুয়া সমাজের নেতৃত্ব তখন গুরুচাঁদ ঠাকুরের বৃষ-স্কন্ধে। কৃষক সমাজের সংগ্রাম তিনি ভোলেননি। পশ্চিমবঙ্গের নমঃশূদ্র সমাজও তাঁকে পরিত্রাতা ভাবতেন। মেদিনীপুরের কৃষক সমাবেশে গুরুচাঁদ ঠাকুরের উপস্থিতির কথা মনে রেখেছেন তারাপদ সাঁতরা।
তিনি চাইতেন পশ্চাদপদ সমাজকে সংগঠিত করতে। নিরক্ষর মানুষ, কিন্তু কোন আত্ম-শক্তি তাঁকে দিল দায়িত্ব, সে বিচার করবে মহাকাল।
বহু আবেদন নিবেদন করে বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে, ওড়াকান্দিতে একটি বিদ্যালয়ের অনুমতি এল। কিন্তু কায়স্থ-প্রধান ফুকরা গ্রামে সরে গেল ইস্কুল।
এই সময়ই এলেন মীড সাহেব। বললেন, ধর্ম ত্যাগ করুন, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করব। অক্ষর জ্ঞান হীন গুরুচাঁদের ইচ্ছা- শক্তির কাছে বিমূঢ় বিহ্বল মীড সাহেব গড়লেন “মিডল স্কুল”। শ্রীমতী মীড গড়লেন দুঃস্থ বিধবাদের কর্মশিক্ষা কেন্দ্র।
আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ‘Journey to Orakandi’ নতুন হিন্দুসমাজ গড়ার ইতিহাস তৈরি করল। পচে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই আত্ম-নির্ভরতার মহাযাত্রা নতুন এক দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনার হিরণ্যগর্ভ ঊষার মতো লাগল।
২৭.৩.২০২১.