রক্ত দিয়ে প্রসূতির প্রাণ বাঁচালেন সাংবাদিক

 প্রসূতিকে রক্ত দিয়ে প্রাণে বাঁচালেন একজন সাংবাদিক। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রসূতি স্নিগ্ধা পড়িয়া দত্ত। তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২ নং ব্লকের পেটবিন্দি গ্রামে। তার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। রবিবার অপারেশনের পর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে প্রসূতির পরিবারকে জানানো হয়, দ্রুত তার ২ ইউনিট রক্ত লাগবে। কারণ প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যদিও ওই গ্রুপের রক্ত নেই ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। তাহলে এই রেয়ার গ্রুপের রক্ত দেবে কে? তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন প্রসূতির পরিজনেরা। প্রসূতির পরিবারের লোকরা তাঁদের পরিচিতদের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন, কিন্তু সকলেই এই রেয়ার গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন।

এদিকে অপারেশনের পর রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে সংকট মুহূর্তে। আর তা নিয়ে কার্যত চিন্তায় পড়েন রক্তদান শিবিরের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি জানতে পারেন ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট ভলেন্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক চন্দন শতপথি। ততক্ষণে হাসপাতালে দুজন বি নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছেন রক্ত দেওয়ার জন্য। কিন্তু চিকিৎসক দু’জনের শারীরিক পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন তাঁরা রক্ত দিতে পারবেন না। আরো সমস্যায় পড়েন সকলে। খোঁজ শুরু হয় বি নেগেটিভ রক্তদাতার। আর সেই সময়ে বাড়িতে বসে সংবাদপত্রের জন্য ছবি পাঠানোর কাজ করছিলেন চিত্র সাংবাদিক তথা ঝাড়গ্রাম রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি সুমন্ত সিনহা। তাঁর কাছে ফোন আসে ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট ভলেন্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক চন্দন শতপথির। দ্রুত রক্ত লাগবে বি নেগেটিভ গ্রুপের। এই কথা শুনে বাড়িতে আর একবিন্দু সময় অপেক্ষা না করে প্রসূতির জীবন বাঁচাতে দ্রুত ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্দেশে রওনা দেন সুমন্ত সিনহা। সেখানে চিকিৎসক তার শারীরিক পরীক্ষা করার পর রক্ত দিতে পারার সবুজ সঙ্কেত দেন। তারপর মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ব্লাড দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন চিত্র সাংবাদিক। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করেন। সন্তান জন্মের পর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের জেরেই প্রসূতির সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর সেই সংকট মুহূর্তে এগিয়ে এসে রেয়ার ব্লাড গ্ৰুপ বি নেগেটিভ রক্ত দিয়ে প্রসূতির প্রাণ বাঁচালেন চিত্র সাংবাদিক তথা ঝাড়গ্রাম রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি সুমন্ত সিনহা।

তিনি বলেন, “খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছি মৃত্যু কাকে বলে। পরিজন হারানোর বেদনা কি? আমার কাছে এই প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি রক্তদান করি। আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য”। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “রক্তদান সকলের করা উচিত, রক্তদানে সকলের এগিয়ে আসা উচিত”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.