গঙ্গায় তখন জোয়ার এসেছিল। কিন্তু খেয়াল করেননি দম্পতি। অষ্টমীর ভোরে স্বামী নেমেছিলেন গঙ্গায়। স্ত্রীকে বলেছিলেন ছবি তুলতে। ইচ্ছে ছিল, গঙ্গাকে পিছনে রেখে ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার। স্ত্রী যখন মোবাইলে স্বামীকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত, তখনই জলের স্রোতে তলিয়ে গেলেন সেই ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা তাঁর দেহ উদ্ধার করেন।
উত্তর বন্দর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রাতুল ভট্টাচার্য (৪২)। বাড়ি বাগুইআটির রঘুনাথপুরে। সোমবার ভোরে উত্তর কলকাতার ভূতনাথ ঘাটে রাতুল গঙ্গায় তলিয়ে যান। সেই সময়ে ঘাটে তেমন একটা ভিড় ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে উদ্ধার করার মতো তেমন কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ সেই ঘাটে পৌঁছয়। খবর দেওয়া হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে। তাদের কর্মীরা এসে গঙ্গায় রাতুলের খোঁজ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ভূতনাথ ঘাটেরই এক জায়গায় কাদায় আটকে থাকা অবস্থায় রাতুলের দেহ মেলে।
না বুঝে গঙ্গায় নেমে জোয়ারের জলে তলিয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ভূতনাথ ঘাটে আগেও ঘটেছে। কয়েক মাস আগেও হাওড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের দুই পরীক্ষার্থী ভূতনাথ ঘাটে এসেছিল স্নান করতে। জোয়ারের টানে তারা দু’জনেই তলিয়ে যায়।
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও লোকজন এ নিয়ে ভাবেন না। দিনের ব্যস্ত সময়ে যখন জোয়ার চলে, তখন সাধারণত ঘাটের কাছে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে সাবধান করেন। কিন্তু এ দিন প্রায় কাকভোরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তখন সেখানে কেউ ছিলেন না।’’
রাতুলের পরিবার সূত্রের খবর, তিনি ও তাঁর স্ত্রী রবিবার রাতে ঠাকুর দেখে এ দিন ভোরে ভূতনাথ ঘাটে পৌঁছন। জলে নেমে রাতুল তাঁর স্ত্রী লিপিকাকে ছবি তুলে দিতে বলেন। লিপিকা যখন ছবি তুলছেন, তখনই জলের তোড়ে ভেসে যান রাতুল।
এ দিন লিপিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাতুল সমাজমাধ্যমে নিজের ছবি পোস্ট করতেন। লিপিকা বলেন, ‘‘রাতুল আমাকে মোবাইলে ওর ছবি তুলতে বলেছিল। ও জলে নেমেছিল। আমি যখন ছবি তুলছি, তখনই জলের তোড়ে ও ভেসে যায়। তখন যে গঙ্গায় জোয়ার চলছিল, আমরা বুঝতে পারিনি।’’
মহাষ্টমীর সকালে যখন সর্বত্র খুশির পরিবেশ, সেই সময়ে এমন দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত রাতুলের পরিবার।