শেষ তিন বছরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েই সবথেকে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সংসদে এমনটাই দাবি করল কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর যত অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে তার প্রায় ১৩ গুণ বেশি বেআইনি প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র।
লোক জনশক্তি পার্টির সাংসদ চিরাগ পাসোয়ান জানতে চেয়েছিলেন, গত তিন বছরে সীমান্ত দিয়ে কতগুলি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রশ্নের ভিত্তিতে মঙ্গলবার লোকসভায় একটি লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে ১২৮ টি অনুপ্রবেশের ঘটনা, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ১,৭৮৭ টি, নেপাল সীমান্ত দিয়ে ২৫ টি এবং মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে ১৩৩ টি অনুপ্রবেশের ঘটনার খবর মিলেছে। তবে চিন এবং ভুটান সীমান্ত দিয়ে সেই সংখ্যাটা শূন্য।’ এমনিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পাঁচ রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা) সীমান্ত আছে। যে সীমান্ত ৪,০৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ।
অমিত শাহের ডেপুটি জানান, আইন মোতাবেক সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিষয়টির উপর নজর রেখেছে সীমান্তে প্রহরারত বিভিন্ন বাহিনী। সেইসঙ্গে অনুপ্রবেশে লাগাম টানতে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাড়তি বাহিনী মোতায়েন, সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া, আলো লাগানো, টহলদারির মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ কম করতে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সীমান্তে প্রহরার দায়িত্বে থাকা বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং পঞ্জাবের মতো রাজ্য। দুই রাজ্যের বিধানসভায় বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। মঙ্গলবারই আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগাল্যান্ডকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিএসএফকে নিয়ে পুলিশকে ‘সতর্ক’ করেন। উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মমতা বলেন, ‘তোমাদের (দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশকে উদ্দেশ্য করে) ওখানে একটা প্রবলেম আছে। বিএসএফ ঢুকে যায় গ্রামে-গ্রামে। গিয়ে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে বলে অনেক সময় অভিযোগ আসে। এমনকী ভোটের সময় ভোটের লাইনেও তাদের দেখা যায়। তোমরা কি কখনও বিএসএফের ডিজির সঙ্গে কথা বলেছ? এটা ডিজি-টু-ডিজি (রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং বিএসএফের ডিজি) কথা হবে। বিষয়টি বিএসএফের কাছে উত্থাপন করেছ?’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি জেলা, বিশেষত মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর – প্রচুর বিএসএফ… ওরা করে কী, ওদের ১৫ কিলোমিটার আসার কথা, সেটাও পুলিশকে জানিয়ে। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়ে যেখানে-সেখানে ঢুকে যায়।’
নাগাল্যান্ডের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘নাগাল্যান্ডে দেখেছ তো কী প্রবলেম হল? সুতরাং তোমায় জানতে হবে। শীতলকুচিতে তোমরা দেখেছে, কী প্রবলেম হল। কয়েকদিন আগে কোচবিহারে কয়েকজন মারা গিয়েছেন গুলিতে। এরা লোকাল পুলিশকে না জানিয়েই…কোনওরকম কোনও দ্বন্দ্ব হোক, সেটা আমি চাই না। সেজন্য তোমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। আর আমাদের আইসিরা অনেক সময় ভাবেন, না, না, ঠিক আছে। ওদের ছেড়ে দাও। কে কে ছেড়ে দেন? আপনার এলাকায় বাইরের লোক ঢুকলে, মানে যার ঢোকার কথা নয়… আইন-শৃ্ঙ্খলা তো আপনাদের হাতে।’ সঙ্গে বিডিওয়েরও সতর্ক থাকতে বলেন। প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএসএফকে এক্তিয়ার বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।