টেট চাকরিপ্রার্থীদের অনশন আন্দোলন স্থলে রাজ্যকে পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আন্দোলনকারীদের ‘বাধা’ পেরিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের যাতে নিশ্চিন্তে কাজে যোগ দিতে পারেন, রাজ্যকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তারই ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ, পুলিশ আন্দোলনকারীদের অবস্থান-বিক্ষোভ সরিয়ে দেবে, এমন কোনও নির্দেশ আদালতের তরফে দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, আন্দোলনের কারণে পর্ষদের দৈনিক কাজকর্ম যাতে ব্যাহত না হয়। তবে হাইকোর্টের এই নির্দেশ ‘অন্তর্বর্তী কালীন’।
টেট আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের জন্য পর্ষদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই আবেদনে তারা বলেছিল, আন্দোলনের জন্য দফতরে প্রবেশ করতেই পারছেন না পর্ষদের কর্মীরা! ফলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দৈনন্দিন কাজ শিকেয় উঠেছে। এ ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়েছিল পর্ষদ। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনেরই শুনানিতে আন্দোলন স্থলে পুলিশ মোতয়েন করার নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, যে হেতু সল্টলেকে আন্দোলন চলছে, তাই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি। যদিও আন্দোলনকারীদের আন্দোলন স্থল বদলানোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেননি তিনি। কোনও মন্তব্যও করেননি।
গত সোমবার থেকে সল্টলেকের করুণাময়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতর এপিসি ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার তা চতুর্থ দিনে পড়ল। পর্ষদ জানিয়েছিল, এর ফলে তাদের বিবিধ অসুবিধা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্ষদের আবেদনের শুনানি চলাকালীন রাজ্যও আদালতকে জানায়, আন্দোলন স্থলে তারা ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ফলে সেখানে কোনও জমায়েত করা নিষিদ্ধ। কিন্তু বিচারপতি রাজ্যের ওই বক্তব্য নিয়ে আদালতের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। বরং তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আদালত কিছু বলছে না। আপনারা বলছেন বলে আমি লিখছি।’’
হাই কোর্টের এই নির্দেশ অবশ্য ‘অন্তর্বর্তীকালীন’। কারণ, আদালতে এখন পূজাবকাশ চলছে। বৃহস্পতিবার আদালতের অবকাশকালীন বেঞ্চই ওই নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি জানিয়েছেন, মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৪ নভেম্বর হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে। আপাতত আদালতের বৃহস্পতিবারের নির্দেশই জারি থাকবে আন্দোলন স্থলের জন্য।
বৃহস্পতিবার টেট আন্দোলন নিয়ে আদালতের ওই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌতম পাল। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের উপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে নেব।’’ উল্লেখ্য, বুধবার আন্দোলনের তৃতীয় দিনেই গৌতম স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, আন্দোলন চললেও তাঁর পক্ষে নিয়ম ভেঙে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিকে আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেন, নিয়োগপত্র হাতে না পেলে তাঁরাও আন্দোলন স্থল ছেড়ে কোথাও যাবেন না। তার মধ্যেই এসেছে আদালতের তরফে আন্দোলন স্থলে পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ।