মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডারের নিচে বসে ফটো তুলেছিলেন। সেই ছবি ফেসবুকে দিয়ে নজর কেড়েছিলেন সিবিআইয়ের ভুয়ো আইনজীবী সনাতন রায়চৌধুরী। ছবিতে সিবিআই-এর নিজাম প্যালেসের অফিসকে ট্যাগ করা হয়েছে। সেই সনাতনকে প্রতারণার অভিযোগে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জাল টিকাকান্ডে ধৃত কসবার দেবাঞ্জনের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠতার খবর একের পর এক আসায় রাজ্যের শাসক দল রীতিমত ফাঁপড়ে। বিভিন্ন সূত্র থেকে এই যোগসাজসের নিত্যনতুন খবর এখনও আসছে। এর মধ্যেই ধরা পড়ল সনাতন। ধৃত আইনজীবীর ফেসবুক পোস্ট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তিনি গত ১৩ জুন অসিত ব্যানার্জির সঙ্গে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। গুগুল ম্যাপ-সহ সেটা পোষ্ট করেছেন সনাতন রায়চৌধুরী। আবার নিজের চেম্বারে এই তৃণমূল নেতা অসিত ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলার ছবিও দিয়েছেন ফেসবুকে।
ভুয়ো আইএএস আধিকারিকের হাত থেকে সাবধান হতে জনগণকে সচেতন করেছিলেন সিবিআইয়ের ‘ভুয়ো’ আইনজীবী! টিকা-কাণ্ডে দেবাঞ্জন দেব ধরা পড়ার পর ’প্রতারকের হাত থেকে সাবধান, ভুয়ো’ এমনই সাবধানবাণী নেটমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন ধৃত ভুয়ো আধিকারিক সনাতন রায়চৌধুরী। জনগণকে সচেতন করা দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো টিকা-কাণ্ড সামনে আসতেই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সমালোচনা, নিন্দা, প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সেই তালে তাল মেলাতে ভোলেননি ভুয়ো আধিকারিক সনাতনও। দেবাঞ্জনের গ্রেফতারের ছবি দেওয়া একটি সংবাদ নেটমাধ্যমে ২৫ জুন পোস্ট করেন সনাতন। এর পর লেখেন, ‘দয়া করে প্রতারকদের থেকে সাবধান হন।’
গত ৫ জুন তৃণমূল ভবনে সাংগাঠনিক বৈঠকের একটি সংবাদ চ্যানেলের লাইভ ধৃত আইনজীবী শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। ২৯ জুন শেয়ার করেছেন অপর একটি সংবাদ চ্যানেলের মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি। নীল বাতি লাগানো গাড়িতে যাতায়ত করা, নিজেকে সিবিআই এবং রাজ্য সরকারের আধিকারিক বলে পরিচয় দিতেন। জালিয়াতি করে জমি বাড়ি বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত করে কলকাতা পুলিশের জালে এখন সনাতন।
আপতদৃষ্টিতে নিজেকে ‘সচেতন নাগরিক’ এবং নেটমাধ্যেমে নিজের ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ বজায় রাখতেই প্রতারণা-কাণ্ডে ধৃত সনাতন এই পোস্ট করেন বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়াও নেটমাধ্যমে একাধিক ছবিতে সিবিআই-এর নিজাম প্যালেসের অফিসকে ট্যাগ করা হয়েছে। আপাতত পুলিশের জালে তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বরাহনগর এলাকার বাসিন্দা সনাতন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী। তিনি নিজেকে রাজ্য সরকার ও সিবিআই-এর কৌঁসুলি পরিচয় দিতেন। ফেসবুকে সনাতন রায়চৌধুরী নিজের যা শিক্ষাগত পরিচয় দিয়েছেন, তা দেখে রীতিমত হাঁ হয়ে যেতে হয়!
অভিযুক্তের ফেসবুকে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কোনও ছবি চোখে পড়েনি। যদিও সনাতন রায়চৌধুরীর কাছ থেকে তাঁর নামে বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্যপদের পরিচয়পত্র খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, তাঁর কাছ থেকে পদ্মফুলের ছবি দেওয়া ‘ভিজিটিং কার্ড’-ও পাওয়া গিয়েছে। তাতে ‘এগজিকিউটিভ মেম্বার, ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস সেল’ লেখা রয়েছে। ওই কার্ডে নয়াদিল্লির ১১ অশোক রোডে বিজেপি-র সদর দফতরের ঠিকানাও রয়েছে। যদিও বিজেপি-র তরফে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, দলীয় সদস্যপদের জন্য রসিদ প্রয়োজনই হয় না।
গড়িয়াহাট থানা এলাকায় জমি-বাড়ি বিক্রিতে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। এই কাজে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও আছে। সোমবার গড়িয়াহাট এলাকায় ১০ কোটির একটি সম্পত্তি দখল করতে এসেছিলেন সনাতন। যদিও প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ হওয়াতে প্রথমে তাঁকে আটক করা হয়। পরে আরও তদন্তের পরে গ্রেফতার করা হয়।সনাতনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর আরও প্রতারণার খোঁজ পেতে চাইছে পুলিশ।