ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগ তৈরি করেছে গোটা রাজ্যেই। প্রতি দিনই বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিশেষ করে রাজ্যের তিনটি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনা নিয়ে চিন্তিত জেলা প্রশাসন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই তিনটি জেলায় ডেঙ্গি ভাইরাস অতি সক্রিয়। প্রায় প্রতি দিনই শতাধিক মানুষ মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভিড় বাড়ছে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। তিন জেলার মধ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উত্তর ২৪ পরগনায়। যা আলাদা করে প্রশাসনকে চিন্তায় রেখেছে।
তিনটি জেলায় মোট আটটি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। মুর্শিদাবাদের সুতি, লালগোলা, ভগবানগোলা ব্লক, নদিয়ার রানাঘাট, হরিণঘাটা ব্লক এবং উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ দমদম, বনগাঁ এবং বিধাননগরে ডেঙ্গি তুলনায় অনেক বেশি।
মুর্শিদাবাদ জেলার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শনিবার পর্যন্ত সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়েছে। বেসরকারি হিসাব বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ২৮ জন রোগী ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি আছেন। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন হাসপাতলে বেশ কিছু ডেঙ্গি রোগী চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সতর্ক। তবে উদ্বেগের কিছু নেই।’’
মুর্শিদাবাদের সুতি, লালগোলা এবং ভগবানগোলা ব্লককে ডেঙ্গির হটস্পট চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মশার লার্ভা দমনে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা-ও জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
নদিয়ার পরিসংখ্যানও সন্তোষজনক নয়। রানাঘাট এবং হরিণঘাটা ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। যদিও স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, সরকারি পোর্টালে নথিবদ্ধ ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবের বিস্তর ফারাক রয়েছে। নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষ দাস বলেন, ‘‘নদিয়ার ডেঙ্গি পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটা ভাল হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। এই রোগে যাঁরা আক্রান্ত রয়েছেন, আপাতত তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।’’
উত্তর ২৪ পরগনায় গত এক সপ্তাহে শহর এবং গ্রামাঞ্চল মিলিয়ে ১৪৬১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে উত্তর ২৪ পরগনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছ’হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। শুধু চলতি মরসুমেই দক্ষিণ দমদমে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৫২০ জন। ভয় ধরাচ্ছে বনগাঁ ব্লকের পরিসংখ্যানও (মোট আক্রান্ত ৪৬৩ জন)। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক দক্ষিণ দমদমে এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক বনগাঁ ব্লকে গিয়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘বর্ষার সময় প্রত্যেক বছর ডেঙ্গি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জেলার সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করে যথেষ্ট কাজ করছে। সাধারণ মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ আরও সহজ হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনায় প্রতি বছরই ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরের মতো এ বার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের প্রচার তুলনামূলক কম। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।