গার্ডেনরিচের বহুতল ভেঙে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট, এখনও কয়েক জন আটকে রয়েছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে

গার্ডেনরিচের বহুতল-বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল আট জন। সকাল থেকে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে আরও চার জনকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রশাসন সূত্রে সাত জনের নাম জানা গিয়েছে। মৃতেরা হলেন শামা বেগম (৪৪), হাসিনা খাতুন (৫৫), রিজওয়ান আলম (২২), আকবর আলি (৩৪), মহম্মদ ওয়াসিক, মহম্মদ ইমরান এবং রমজান আলি। তাঁদের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে রিজওয়ান, আকবর, ওয়াসিক, ইমরান এবং রমজানকে মৃত বলে ঘোষণা করে এসএসকেএম। সূত্রের খবর, ধ্বংসস্তূপ থেকে ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও এক জন আটকে আছেন। উদ্ধারের কাজ চলছে। দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকাজ শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে যেতে পারে।

প্রশাসন সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গার্ডেনরিচের ঘটনায় মোট আহতের সংখ্যা ১৬ জন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় হাসপাতালের পাশাপাশি কয়েক জনকে নিয়ে আসা হয়েছিল এসএসকেএমে। এঁদের মধ্যে চার জনকে চিকিৎসার পর এসএসকেএম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, জাহারা বেগম, মহম্মদ আসলাম, শাহিনা খাতুন এবং নুর সালিম ইসলাম। এ ছাড়া, স্থানীয় হাসপাতালটিতে ১২ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুপুরে সেখান থেকে মইনুল হক, মুসরত জাহান এবং মহম্মদ সাইলুদ্দিন গাজীকে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তিন জন শিশুও।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর নাম মহম্মদ ওয়াসিম।

রবিবার রাত ১২টা নাগাদ গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। বেশ কয়েকটি টালির চালের বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। রাতেই সেখানে পৌঁছন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাচক্রে, যিনি ওই এলাকার বিধায়কও। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা সারা রাত এলাকায় ছিলেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিছু দিন আগে নিজের বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে চোট পেয়েছেন তিনি। কপালে ব্যান্ডেজ নিয়েই সকাল সকাল গার্ডেনরিচে যান মমতা। এলাকা ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। ফিরহাদ জানান, সরকারের তরফে মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন মমতাও।

মৃত আকবর আলির পরিবারের সদস্য নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘আকবর ঘুড়ি তৈরি করত। আমার বোনের অবস্থাও খুব খারাপ। ওখানে ওরা ভাড়া থাকত। বাড়িতে কতটা কী ক্ষতি হয়েছে, এখনও জানি না। আমরা সকালে খবর পেয়েছি।’’

ফিরহাদ মেনে নিয়েছেন, বহুতলটি বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল। প্রোমোটারকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গার্ডেনরিচের ঘটনায় ফিরহাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন শুভেন্দু। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামস ইকবালের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন তিনি। ফিরহাদের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণের খবর মেয়রের কাছে ছিল না, এ কথা মানতে রাজি হননি। যদিও শুভেন্দুর অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘‘দোষীদের শাস্তি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এ বিষয়ে বিজেপিকে ভাবতে হবে না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.