প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়ার অগ্রাধিকার স্থির করার পদ্ধতি নিজের হাতেই রাখল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যে ‘কোটা’ (বাড়ি তৈরির টাকা পাওয়ার যোগ্য উপভোক্তা সংখ্যা) চলতি আর্থিক বছরের জন্য স্থির করে দিয়েছে কেন্দ্র, তার মধ্যে কারা আগে বাড়ি তৈরির টাকা পেতে শুরু করবেন, সেই ক্রমতালিকা স্থির করে দেবে কেন্দ্রেরই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। একই সঙ্গে, বাড়ি তৈরির প্রতিটি ধাপে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে রাজ্যকে।
আবাস (প্লাস) প্রকল্পের উপভোক্তা-তালিকায় আগে প্রায় ৪৬ লক্ষ নাম থাকলেও, কেন্দ্রের বিধি মেনে যাচাই প্রক্রিয়ার পরে এখনও পর্যন্ত সেখানে ‘যোগ্য’ উপভোক্তা হিসাবে ঠাঁই পেয়েছেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে চলতি আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) জন্য রাজ্যকে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার ৪২৮ জন উপভোক্তার বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু কারা এ বার টাকা পেতে শুরু করবেন, সেই ক্রমতালিকা কার্যত নির্ভর করছে কেন্দ্রের সফটওয়্যারের উপর।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “প্রথমে মনে করা হয়েছিল, এই আর্থিক বছরের জন্য প্রায় ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার উপভোক্তাকে বাড়ি দেওয়ার অনুমতি দেবে কেন্দ্র। কিন্তু যে কোটা তারা বরাদ্দ করেছে, তা অনুমানের চেয়েও প্রায় ১ লক্ষ কম। কেন্দ্রের তথ্য ভান্ডারে উপভোক্তাদের যে নাম রয়েছে, সেখান থেকেই অগ্রাধিকার স্থির হবে। রাজ্য শুধু জানতে পারবে টাকা প্রাপকের নামটি। তার ভিত্তিতে তাঁকে প্রকল্পের কিস্তির নিয়মে টাকা দেওয়া হবে।”
প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, একটি বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তা সরকারের থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পান। প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার, পরের দু’টি কিস্তিতে ৫০ এবং ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, উপভোক্তার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরে একেকটি নাম কেন্দ্রের পোর্টালে নথিবদ্ধ (রেজিস্ট্রেশন) করাতে হয়। তখন উপভোক্তার তথ্যপ্রমাণ এবং তাঁর বাড়ি তৈরির জায়গার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-সহ ছবি আপলোড করতে হবে পোর্টালে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সময় এবং ক্রমতালিকা অনুযায়ী বাড়ি তৈরির টাকা বরাদ্দ হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, তিনটি ধাপেই কতটা কাজ হয়েছে তার ছবি দাখিল করতে হবে রাজ্যকে। সঠিক উপভোক্তাই সেই সুবিধা যে পাচ্ছেন, তা বোঝাতে সেই ছবির সঙ্গেও জুড়ে দিতে হবে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ। যাতে উপভোক্তার বাড়ির সঠিক অবস্থান বোঝা যায়। এক কর্তার কথায়, “সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যাচাই-আধিকারিক বিশেষ মোবাইল সফটওয়্যারের মাধ্যমে এ কাজ করবেন। ফলে তাঁর মোবাইলের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ কেন্দ্রের পোর্টালে নথিবদ্ধ হবে। পরে যদি কখনও কেন্দ্রীয় দল যাচাই করে, তখন তা মিলিয়ে দেখা হবে আপলোড করা নথির সঙ্গে। ফলে নজরদারির কড়াকড়ি রয়েছে যথেষ্টই।”
তবে প্রশাসনের অনেকেই জানাচ্ছেন, চলতি বছরের ‘কোটা’ শেষ করতে হবে ৩১ মার্চের মধ্যে। না হলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে রাজ্যকে। কিন্তু এত উপভোক্তার বাড়ি তৈরির অগ্রগতি নিয়মিত নজরদারি করা যে খুব সমস্যার, তা মেনেই আশঙ্কায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।