মোবাইলে গেম খেলতে ভালবাসত ছেলেটা। আর শখ ছিল ছবি তোলার। বন্ধুদের সবার দামি মোবাইল। মায়ের কাছে দামি ফোনের আবদার করেছিল সে-ও। কিন্তু অল্প আয়ের সংসারে যে সেই খরচ জোগানো সম্ভব নয়, তা বুঝতে দেরি হয়নি। কিছুটা জেদের বয়সেই উপার্জনের সন্ধানে বাড়ি ছেড়েছিল সদ্য কৈশোর পেরোনো ১৬ বছরের ছোটন শেখ। রবিবার দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থলে সেই ছোটনেরই ছিন্নভিন্ন দেহ খুঁজে বার করলেন তাঁর মা। রবিবারের বিস্ফোরণে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে তাঁর কোল। শুধু ছোটন নয়, দত্তপুকুরের বাজি কারখানায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর আরও এক ছেলে ১৯ বছরের আমজাদ শেখের।
চোখ বন্ধ করলেই দৃশ্যগুলো ভেসে ভেসে উঠছে আনকরি বিবির। যে ছেলেদের আদর-যত্নে বড় করেছেন, তারাই টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল ধ্বংসস্তূপে। ছোট ছেলেকে চিনেছিলেন, তার পরনে থাকা খাকি হাফপ্যান্ট দেখে। হয়তো সেটি কখনও তিনিই কিনে এনে দিয়েছিলেন ছোট ছেলেকে। বড় ছেলেকে চিনতে পারলেন তার সবুজ রঙের টি শার্ট দেখে। এটাই তো সব সময় পরে থাকত সে। কিন্তু দেহের বাকি অংশের দিকে তাকানো যায় না। বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে গিয়েছিল বড় ছেলে আমজাদের দেহের নিম্নাংশ!
মনে পড়লেই জ্ঞান হারাচ্ছে আনকরির। কখনও ডুকরে কেঁদে বলছেন, এই কাজ করতে হবে জানলে কখনওই যেতে দিতাম না ওদের। আবার কখনও ছোট ছেলের ছবিতে হাত দিয়ে অস্পষ্ট শব্দে গোঙানির মতো বলে চলেছেন, ‘‘মোবাইল দেব, ফিরে আয় বাবা….’’
দত্তপুকুর বাজি কারখানার বিস্ফোরণ কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের ছ’জনের দেহ শনাক্ত করেছে পুলিশ। এদের প্রত্যেকের বাড়ি সুতি থানা এলাকার চাদরা গ্রামে। আর এদের মধ্যে চার জনই এক পরিবারের সদস্য। ছোটন এবং আমজাদ একই মায়ের সন্তান।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে চাদরা গ্রাম থেকে ১০ জন কাজের উদ্দেশে উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতে যায়। প্রত্যেকেই রাজমিস্ত্রীর কাজে যাচ্ছেন জেনে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু পরে স্থানীয় দুই এজেন্টের মাধ্যমে মোটা টাকা মজুরির বিনিময়ে দত্তপুকুরের বাজি কারখানায় কাজে যোগ দেন দুই নাবালক-সহ ওই ১০ জন। যা পরিবারের লোকজন জানতেন না বলে দাবি।
সোমবার যদিও আনকরি বিবি দাবি করেছেন, ‘‘এই ঘটনার মূল পাণ্ডা মোহন শেখ নামে এক তৃণমূল নেতা। তিনিই আমার ছেলেকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেবেন বলে নিয়ে গিয়ে বাজি কারখানায় কাজে নিয়োগ করেন। ফোনে কিছু বলতে দিতেন না ছেলেদের। বেতন বাবদও বিশেষ কিছু দেননি বলে তাঁকে জানিয়েছিল ছেলেরা l’’ পুত্রহারা মায়ের দাবি, ওই নেতাকে গ্রেফতার করলেই সব সত্যি প্রকাশ্যে আসবে।