ঐতিহ্য সংরক্ষণে শৈশব থেকেই পড়ুয়াদের বোঝানোর পরামর্শ অভিজ্ঞদের

স্কুলজীবন থেকেই পড়ুয়াদের ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ঐতিহ্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুই অভিজ্ঞ ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আলোচনার একটি পর্বে এই সিদ্ধান্তে আসেন।

‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইন্সটিট্যুট ফর রিসার্চ এডুকেশন অ্যান্ড স্কিলস’, ‘ইণ্ডিপেণ্ডেণ্ট রিসার্চ সোসাইটি’ এবং ‘আয়ুষ সমৃদ্ধি’-র উদ্যোগে এই আলোচনায় দুটি পর্ব ছিল। একটি ওষুধের গুনগত মান বজায় রাখা এবং ক্রেতাদের কাছে তার সঠিক পরিচয় দেওয়া। অপর পর্বটি ছিল ঐতিহ্য সংরক্ষণ। প্রসঙ্গত, এই দিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল ছিল আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য দিবস।

কানাডার আলবার্টার একটি প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ রিসার্চ ডিরেক্টর ডঃ সৈকত কুমার বসু আলোচনায় বলেন, ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটা অন্যতম প্রধান অন্তরায় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা। অনেক ক্ষেত্রে সেই সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য মালিকপক্ষ যা প্রত্যাশা করেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে বা সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার পক্ষে সেটা দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার সার্বিক আগ্রহ ও সচেতনতার অভাবও সংরক্ষণের একটা বড় অন্তরায়। অনেক সময় মালিকানা নিয়ে মামলা দীর্ঘায়িত হয়। আশু সংস্কার করা সম্ভব হয় না। কিছু ক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রী এবং সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতির প্রয়োগের অভাবও বিচার্য বিষয় হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে, আমাদের ভাবনাটাকে প্রসারিত করা দরকার। মনে রাখতে হবে তাজমহল কারও ব্যক্তিগত, কোনও সম্প্রদায়ের বা রাজ্যিক সম্পত্তি নয়। এটা গোটা দেশেরে, বিশ্বের সম্পত্তি। আর এই দৃষ্টিভঙ্গী আনতে ছোটবেলা থেকেই সবাইকে সচেতন করতে হবে। তবেই সার্থক হতে পারে ঐতিহ্য সংরক্ষণ।

সৈকতবাবুর আগে এই পর্বের প্রথম বক্তা হিসাবে ঐতিহ্য-লেখক এবং সর্বভারতীয় বহুভাষিক সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্ত তৃণমূল স্তরে পড়ুয়াদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের উপযোগিতার কথা বলেন। সেনেট হল, অল ইণ্ডিয়া রেডিও-র পুরনো ভবন, ডালহৌসি ক্লাবের মত কলকাতার অতীতের কত ঐতিহ্য এই সচেতনতার অভাবে হারিয়ে গিয়েছে, আবার লেখালেখির মাধ্যমে কীভাবে ডালহৌসির ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং ও টাউন হলের মত ঐতিহাসিক ভবনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল, তার বিশদ ব্যাখ্যা করেন। বলেন, কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঐতিহ্য সংরক্ষণকে একটা কর্মযজ্ঞ ধরে সেটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেন, কীভাবে ১৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য দিবসের স্বীকৃতি পেল, আলোচনার শুরুতে তা ব্যাখ্যা করেন অশোকবাবু।


ছবি: ৯৩ টালিগঞ্জ রোডে বাওয়ালির মণ্ডলদের ছোট রাসবাড়ি।

এদিন অপর পর্বের ওয়েবিনারের আলোচনার বিষয় ছিল ‘স্টপ মিসব্রাণ্ডিং, এভয়েড ওভারক্লেমস’। তাতে বক্তারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওষুধ, মূলত আয়ুর্বেদ ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখতে সরকার, প্রশাসন এবং প্রতিটি প্রস্তুতকারককে সতর্ক থাকার আবেদন করেন। এই পর্বের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণ দেন বোর্ড অফ এথিকস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন ফর ইণ্ডিয়ান সিস্টেম অফ মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ভি ডি রাকেশ শর্মা। আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উদয়পুরের ডঃ রামপাল সোমানি, জয়পুরের ডঃ এল কে দ্বিবেদী, নয়াদিল্লীর অনিল জহুরি, কলকাতার ডং সি কে কাটিয়ার, অধ্যাপক সি বি ঝা, অজমীঢ়ের ডঃ মহেশ সি শর্মা, ডঃ শ্যামলেন্দু মুখার্জি এবং ডঃ এস কে বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাউসার আইনজীবী দুর্গাপ্রসাদ সাইনি, হায়দরাবাদের ডঃ পিবিবি প্রসাদ।
প্রারম্ভিক এবং সমাপ্তি ভাষণের জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন যথাক্রমে গুয়াহাটির অধ্যাপক বিষ্ণু পি শর্মা ও বারাণসীর অধ্যাপক বিনীত কুমার অগ্নিহোত্রী।

এদিনের আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আলোচনার দুটি পর্বেই সংযোজনায় ছিলেন ভোপালের অধ্যাপক পবন কুমার শর্মা। সহযোগী সংযোজক ছিলেন দেরাদুনের ডঃ রাজীব কুরেলা।

ছবি: ওপরে, বিষ্ণুপুরে শ্যামরায়ের মন্দির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.