নতুন বছর পড়তেই যেন আরও এক কদম এগিয়ে এল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। ২০২৩ সালে ভোট ৯টি রাজ্যে। যার ফলাফল নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। চব্বিশের ফাইনালের আগে কার্যতই সেমিফাইনাল যেন এই বছর। যা চিহ্নিত করে দেবে লোকসভা নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন রাজ্যে এই বছর নির্বাচন এবং সেই রাজ্যগুলিতে কী পরিস্থিতি?
মধ্যপ্রদেশ: ২০১৮ সালে যখন বিজেপিকে কড়া টক্কর দিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস, তখনও ভাবা যায়নি মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে কী পরিস্থিতি হতে চলেছে! আচমকাই ২৩ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছাড়েন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে। যার ফলে রাতারাতি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় কমল নাথের সরকার। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করা শিবরাজ সিং চৌহান ফের ক্ষমতায় ফেরেন। এই বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশের ২৩০ সদস্য়ের বিধানসভা নির্বাচন। যা চৌহানদের কাছে লিটমাস টেস্ট হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজস্থান: মরুরাজ্যের রাজনীতিকে একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্য হল, এখানে কখনওই সরকার পুনরাবৃত্ত হয় না। ২০১৮ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল বসুন্ধরা রাজে সরকারের পতন ঘটিয়ে। এবার ফের নির্বাচন। আর তাকে ঘিরেই প্রশ্ন উঠছে, গেহলট সরকার কি ক্ষমতা থেকে সরে যাবে? ফের পদ্মফুল ফুটবে রাজস্থানে? ডিসেম্বরে ২০০ সদস্যের রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস কি গেহলট-শচীন পাইলট দ্বন্দ্ব সামলে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করবে? নাকি গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটাবে? উত্তর ঘিরে বাড়ছে জল্পনা।
ছত্তিশগড়: ২০২৩ সালে সকলের চোখ থাকবে ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। এর আগের বার ৯০ আসনের মধ্যে ৬৮টিতে জিতে কংগ্রেস ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপির থেকে। শেষ হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের ১৫ বছরের শাসন। কিন্তু তেইশেও তারাই ক্ষমতা থাকবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না এখনও। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেওয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে হাত শিবিরের জন্য। ফলে বিজেপিকে আবারও হারানো তাদের কাছে চ্যালেঞ্জের।
কর্ণাটক: শনিবারই কর্ণাটককে দক্ষিণে বিজেপির প্রবেশের দ্বার বলে বর্ণনা করেছেন অমিত শাহ। ২০১৯ সালে কংগ্রেস ও জেডিএস সরকারের মধ্যে ভাঙন ধরলে বিজেপি দখল করে মসনদ। কিন্তু এবার রাজ্যে ক্ষমতা পুনর্দখলে মরিয়া কংগ্রেস। খোদ দলের সভাপতি খাড়গের রাজ্য। তাই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে হাত শিবির।
তেলেঙ্গানা: গত ৫ অক্টোবর কে চন্দ্রশেখর রাও তাঁর দলের নাম তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি থেকে ভারত রাষ্ট্র সমিতি। যা থেকে পরিষ্কার, এবার জাতীয় রাজনীতিতে ঝড় তুলতে চান তিনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদির বিরুদ্ধে জোটের অন্যতম মুখ থাকবেন তিনি। তারই স্টেজ রিহার্সাল ২০২৩ সালে। সেদিকেই নজর সকলের।
ত্রিপুরা: ২০১৮ সালে ২৫ বছরের বাম শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিজেপি যখন এই রাজ্যে সরকার গঠন করে তখন মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব। কিন্তু এই বছরের মে মাসে বিপ্লবকে সরিয়ে মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন। এবছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতান্তর ঘিরে দ্বিধাগ্রস্ত বিজেপি। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এখানে ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে এই বছর বিধানসভা নির্বাচনে জেতাটা অনায়াস হবে না ধরছে গেরুয়া শিবির।
মেঘালয়: ২০১৮ সালে এক বৃহত্তম দল হিসেবে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। জেতে ২১টি আসেন। কিন্তু অচিরেই মাত্র দুই আসনে জেতা বিজেপি শেষ পর্যন্ত ১৯ আসনে জয়ী এনপিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়ে। কিন্তু এবার ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া কংগ্রেস।
নাগাল্যান্ড: ২০১৮ সালে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও বিজেপির জোট ২৯ আসনে দিতে এখানে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু গত বছর বিরোধী নাগা পিপলস ফ্রন্ট জানিয়ে দেয় তারাও সরকারে যোগ দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ে নাগাল্যান্ড। তাই এবার, ২০২৩ সালে কী হয় সেদিকেই চোখ সকলের।
মিজোরাম: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ৪০ সদস্যের বিধানসভা নির্বাচনে কী হয় সেদিকেই নজর সকলের।