জঙ্গি দমনে অসম পুলিশ যে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের দু’জন। এ বারে ওই ধৃতদের সঙ্গে এ রাজ্যের জেলে বন্দি জঙ্গিদের যোগসূত্র পেলেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, এ রাজ্যের জেলে বন্দি কয়েক জন জঙ্গির সঙ্গে ওই ধৃতদের নিয়মিত যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। এমনকি, সংগঠন বাড়ানোর পন্থা নিয়ে জেল থেকেই ওই বন্দিরা নির্দেশ দিচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর। আর তার জেরেই জেলবন্দি জঙ্গিদের উপরে নজরদারি কঠোর করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
মুর্শিদাবাদ থেকে গোয়েন্দা সূত্রে আরও খবর, গত অগস্টে বাংলাদেশে পালা বদলের পরে সে দেশের জেল থেকে মুক্ত হয়ে আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-র প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানিও সম্ভবত সীমান্ত পার হয়ে মুর্শিদাবাদে এসেছিলেন। গোয়েন্দাদের দাবি, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি দুর্লভপুর (গত রবিবার এবিটি জঙ্গি সন্দেহে মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত সাজিবুল ইসলামের গ্রাম) এবং ভোলা গ্রামে (সাজিবুলের সঙ্গেই ধৃত আর এক সন্দেহভাজন জঙ্গি মুস্তাকিন মন্ডলের বাড়ি ওই গ্রামে) আসেন। যদিও সাজিবুলের মা তানজিরা বেওয়া বুধবার দাবি করেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে আমার ভাইপো শাব শেখ ছাড়া বাংলাদেশ বা বাইরের কেউ কোনও দিন আসেননি।’’ পুলিশের ওই সূত্রের আরও দাবি, তল্লাশিতে সাজিবুলের বাড়ি থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছেন এসটিএফের আধিকারিকেরা। ওই ডায়েরিতে আরবি-সহ একাধিক ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে। ওই ডায়েরিতে সাঙ্কেতিক ভাবে কিছু লেখা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এই নেটওয়ার্ক কতটা ছড়িয়ে, তার কিছুটা নমুনা দুই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য থেকে উঠে আসছে। সাজিবুলদের আগে রাজ্য থেকে অসম পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের অভিযানে মিনারুল শেখকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, অসমে গ্রেফতার হওয়া নুর ইসলাম মণ্ডল এবং মিনারুল শেখের মোবাইল-কথোপকথনের সূত্র ধরে জানা গিয়েছে, কী ভাবে জেলবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযাগ রাখত তারা। সে যোগযোগও দীর্ঘদিনের। এই নিয়ে গোয়েন্দারা সবিস্তার কিছুবলতে চাননি।
এর আগেও অবশ্য জেলে বন্দি অবস্থায় মাদক সাম্রাজ্য কিংবা অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল একাধিক বন্দি। কিন্তু জেলবন্দি অবস্থায় জঙ্গিরা সংগঠনের বিস্তারের জন্য বাইরে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে— এমন তথ্য নতুন। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দাদের তরফে এক জঙ্গিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে যাতে বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করতে না-পারে, তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, এ রাজ্যের বহরমপুর, বারুইপুর, দমদম এবং প্রেসিডেন্সি জেলে এই মুহূর্তে বন্দি প্রায় ৪০ জন জঙ্গি। বেশির ভাগ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং এবিটি-এর সদস্য। সেই দলে ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে গ্রেফতার হওয়া আনোয়ার হুসেন ফারুক, মৌলানা ইউসুফের মতো জঙ্গি নেতারাও আছে। রয়েছে খাগড়াগড় এবং বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া কওসর ওরফে বোমারু মিজান, সাজিদ ওরফে রহমাতুল্লা। এ ছাড়া তরিকুল ওরফে সুমনের মতো জেএমবিজঙ্গিও রয়েছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলির সঙ্গে কলকাতার বাইরের একটি জেলে বন্দি এক জঙ্গির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ওই বন্দির নির্দেশেই এ রাজ্যে ওই দুই এবিটি সদস্য সংগঠনের বিস্তারে কাজ করছিলস্লিপার সেলের আড়ালে। এক তদন্তকারী কর্তা জানান, নুর ইসলাম মন্ডল এখানকার এবিটি মডিউলেরমাথা। এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানি এবং ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ফারহান ইসরাকের সঙ্গে জেলবন্দিদের যোগাযোগ রক্ষার কাজ করত সে। মিনারুল ও আব্বাসকে জেরা করেই মুর্শিদাবাদ থেকে সাজিবুল ও মুস্তাকিনকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, শাদ রাডি বা শাব শেখের নির্দেশে এরা সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ এবং সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছিল।