শুল্কে নাস্তানাবুদ এশিয়ার বাজার, দিকে দিকে ক্ষোভ, ট্রাম্প তবু নাছোড়বান্দা! ‘ওষুধে কাজ দিচ্ছে’

বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৯ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর করা হবে। তার আগেই দিকে দিকে শেয়ার বাজারে বড় ধস নেমেছে। সোমবার সকালেও এশিয়ার বাজার ধুঁকছে। নতুন করে পতন ঘটেছে শেয়ারের দামে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন খোদ আমেরিকানরাই। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর গোটা বিশ্ব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাতে খুব একটা পাত্তা দিতে চাইছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘ওষুধে কাজ দিচ্ছে।’’

শেয়ার বাজারের বেসামাল দশার দায় নিতে চান না ট্রাম্প। রবিবার (স্থানীয় সময়) এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘‘শেয়ার বাজারের কী হবে, আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক বেশি শক্তিশালী।’’ শেয়ার বাজারকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন না এবং করতে চান না, জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই না কোনও বাজারে ধস নামুক, কোথাও কোনও ক্ষতি হোক। কিন্তু কখনও কখনও কিছু জিনিস ঠিক করার জন্য ওষুধ দিতে হয়। আমি সেটাই করেছি।’’ এই প্রসঙ্গে আরও এক বার পূর্বতন জো বাইডেন সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ‘‘এত বছর ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের সঙ্গে ভীষণ খারাপ আচরণ করে এসেছে। কারণ, আমাদের মূর্খ নেতৃত্ব তাদের সেই আচরণ করতে দিয়েছে।’’ আবার আমেরিকাকে ‘মহান’ করে তুলতে চান, জানিয়েছেন ট্রাম্প।

২ এপ্রিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন। তার পর থেকে গত কয়েক দিনে শেয়ার বাজারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার পতন হয়েছে। মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের। মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বে মন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তারা জানিয়েছে, চলতি বছরেই মন্দার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভাবনা অন্তত ৬০ শতাংশ। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে ধাক্কা খাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য। চিন ইতিমধ্যে মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে। রাশ টেনেছে আমেরিকায় পণ্য রফতানিতে। এ ছাড়া, শি জিনপিং চিনে ১১টি মার্কিন সংস্থার বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে তো এর প্রভাব পড়ছেই। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি পরস্পরের প্রতি শুল্ক আরোপ করায় অন্য দেশের বাণিজ্যও ধাক্কা খাচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আমেরিকার বাণিজ্যিক ঘাটতি না মিটলে চিনের সঙ্গে সমঝোতা করবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

শুল্কনীতি ঘোষণার পর ট্রাম্প সমঝোতার বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। জানিয়েছেন, আমেরিকার জন্য কোনও দেশ যদি অভূতপূর্ব কিছু করে দেখায়, তবে শুল্কে ছাড় মিলতে পারে। ভারতের উপর ট্রাম্পের প্রযুক্ত শুল্ক ২৬ শতাংশ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারত-সহ একাধিক দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছে। ট্রাম্পও তাতে খুব একটা রাখঢাক করছেন না। তিনি জানিয়েছেন, শুল্ক আরোপের পর অনেক দেশ আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি এবং সমঝোতা করতে আগ্রহী। আমেরিকা যা বলবে, তা-ই তারা করতে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.