প্রায় ১২ ঘণ্টা! সকাল সাড়ে ১০টায় ঢুকেছিলেন। মঙ্গলবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতর থেকে যখন বেরোলেন, রাত তখন সওয়া ১১টা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। তৃণমূলের যুব নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পর এই প্রথম ইডির মুখোমুখি হলেন তাপস। তাঁকে ফের বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।
রাতে ইডির দফতর থেকে বেরোনোর সময় তাপস কিছু বলতে চাননি। তাঁর কথায়, “এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলব না। আমাকে বুধবার আবার জেরার জন্য ডাকা হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কুন্তলের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। তিনিও কি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত? জবাবে তাপস রাগত স্বরে বলেন, ‘‘যদি মনে করেন, তবে তাই ভেবে নেবেন। তা হলে আর কোনও উত্তর দেব না।’’
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে নাম রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপসের। নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। তাপসের দাবি, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল। এ ছাড়া তাপসের দাবি, তাঁর পরিচিতেরা তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন কুন্তল। সেই সংক্রান্ত নথিও তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তাপস। কুন্তলকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল সিবিআই। এর পর গত শুক্রবার সকাল থেকে তদন্তে নামে ইডি। দু’টি দলে ভাগ হয়ে নিউটাউনের এক আবাসনের দু’টি ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। উদ্ধার করা হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। শুক্রবার সেখানে দিনভর তল্লাশির পর শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাপসের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করে চলেছেন কুন্তল। পাল্টা অভিযোগ করছেন তাপসও। মঙ্গলবার সেই লেনদেন সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাপসকে নিজেদের দফতরে ডেকেছিল ইডি। শনিবার কুন্তল গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী দাবি করেছিলেন, নিউটাউনের যে ফ্ল্যাটে ইডি তল্লাশি অভিযান চালিয়ে নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে, সেখানে দিনের পর দিন থাকতেন তাপস মণ্ডল এবং তাঁর সহযোগী তাপস মিশ্র। কিন্তু জয়শ্রীর দাবি অস্বীকার করেছিলেন তাপস নিজে। পাল্টা দাবি করেছিলেন, সেই ফ্ল্যাটে আনাগোনা থাকলেও কখনও সেখানে থাকেননি। এই একই দাবি তাপস করেছিলেন সংবাদমাধ্যমের কাছেও। জয়শ্রীর দাবি, লকডাউনের সময় ওই ফ্ল্যাটে থেকেই নিয়মিত ব্যবসার কাজ এবং কলেজ সংক্রান্ত কাজকর্ম সারতেন তাপস। তিনি যে ওই ফ্ল্যাটে দিনের পর দিন থাকতেন, তার প্রমাণও ওই ফ্ল্যাটে হাজির। ওই ফ্ল্যাটে তাপসের ব্যবহার করা জামাকাপড় এবং ইনসুলিনের বাক্স এবং সিরিঞ্জ রয়েছে এখনও। জয়শ্রী চিঠি লিখে আর্জি জানিয়েছেন, ইডি যেন সেই সব খতিয়ে দেখে।