সাতক্ষীরার মুসলমান এক যুবক; শ্রীচৈতন্য-প্রভাবে কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হলেন, অতঃপর ধর্মান্তরিত; নতুন নাম হল হরিদাস ঠাকুর, বৈষ্ণব সাধক হিসাবে যাঁর চিরন্তন প্রসিদ্ধি।
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ নাম করতে করতে যখন হরিদাসের মহাপ্রয়াণ ঘটে, মহাপ্রভু শোকে বিহ্বল হয়ে গেলেন৷ সকাল থেকেই তো ভক্তমণ্ডলীকে নিয়ে হরিদাসের পুরীর কুটির বেষ্টন করে নাম সংকীর্তন করছিলেন তিনি। দিব্যানন্দে হরিদাসের যাবতীয় গুণের কথা সবিস্তারে বলছিলেন। প্রিয় ভক্ত শ্রীহরিদাসের প্রয়াণ যখন ঘটল তিনি বারবার কেঁদে উঠলেন, বলতে লাগলেন
“কৃপা করি’ কৃষ্ণ মোরে দিয়াছিলা সঙ্গ।
স্বতন্ত্র কৃষ্ণের ইচ্ছা, কৈলা সঙ্গ-ভঙ্গ।।”
শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ আছে (১১/৯৪)। মৃত শরীরকে কোলে নিয়ে সাগরকূলে পৌঁছালেন, সাগরজলে স্নান করালেন নিজে। অঙ্গে লেপন করা হল প্রসাদী চন্দন। ‘হরি বল’ ধ্বনি দিয়ে নিজেই সমাধিস্থ করলেন চিদানন্দ দেহ। তার উপর বালি, নির্মিত হয়ে গেল সমাধিপীঠ।
হরিদাসের বিরহ-মহোৎসব হবে। তার জন্য শ্রীচৈতন্যদেব নিজের আঁচল পেতে ভিক্ষা করলেন মহাপ্রসাদ। সংগৃহীত প্রসাদ একসঙ্গে করে নিজে হাতে পরিবেশন করলেন ভক্তমণ্ডলীকে, নিজেও সম্মান করলেন মহাপ্রসাদ। আর সমানে কাঁদতে লাগলেন। পারছেন না তিনি এই বিরহ সইতে! ভক্ত ও ভগবানের এ কী লীলা!
হরিদাসের কী ব্যাধি ছিল? হরিদাস বলেছিলেন, নামকীর্তন পূর্ণ হচ্ছে না তাঁর, এটাই তার ব্যাধি। তাঁর শরীর সুস্থ, অসুস্থ কেবল তাঁর বুদ্ধিমন। গৌরহরি তখন বলছেন, হরিদাসের সিদ্ধদেহে সাধন অভিনয়ের আগ্রহের প্রয়োজন তো নেই। পুরীর সেই সিদ্ধ-বকুলের তলায় আজও লেপ্টে আছে এই মহান বৈষ্ণবের নাম-সংকীর্তনের পূর্ণ হিসেব ও ইতিহাস৷
কল্যাণ চক্রবর্তী