স্বভিমান অঞ্চল: এককালে ‘মাওবাদীদের দুর্গ’ কীভাবে ফিরছে উন্নয়নের মূল স্রোতে?

1/5রাজ্য ওড়িশা, জেলা মালকানগিরি, গ্রাম সিন্ধিপুট। এখানের এক অ্যাসবেসটাসের চালার ঘরে বসবাস করেন ৩৮ বছর বয়সী জশোদা আলাং। তাঁর গ্রাম জোদাম্বো গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় পড়ে। সামনেই গ্রামে ২৪ ফেব্রুয়ারি রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। যশোদা খুব উচ্ছ্বসিত তাঁর ভোটদানের ক্ষমতা নিয়ে, যশোদা উচ্ছ্বসিত ভোট নিয়ে। উচ্ছ্বসিত তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে। যশোদাদের এই এলাকা মালকানগিরির স্বভিমান অঞ্চল। এককালে মাওবাদের আঁতুরঘর বলে খ্যাত ওই এলাকায় এখন বহু জায়গায় চোখে পড়ে উন্নয়নের ছবি। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্য হিন্দুস্তান টাইমস)

সামনেই ফেব্রুয়ারিতে ভোট। এমনই এক ফেব্রুয়ারি মাসে ২০১১ সালে এই এলাকা থেকে মালকানগিরিরি জেলা কালেক্টর আর ভমিনিল কৃষ্ণা ও এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। আটকে রাখা হয় দিন। এলাকার মাও নেত্রী তথা মাওবাদী সিপিআইএর সেন্ট্রাল কমিটির নেতা রামকৃষ্ণর স্ত্রী গন্তি প্রসাদনকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ওই দুই প্রশাসনিক কর্তাকে ছাড়ে মাওবাদীরা। এরপর ২০১২ সালে এই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভয়াবহ আইইডি বিস্ফোরণ হয়। যশোদা আলাংএর মতো বহু মানুষ সেই রক্তাক্ত অস্থির পরিস্থিতির সাক্ষী ছিলেন। যোশাদ বলছেন, 'মাওবাদীরা এলাকায় ৪০ বছ শাসন করেছে। একবার তারা বয়কটের ডাক দিলে কারোর সাধ্য ছিল না তা অমান্য করার। তবে এবার আমরা যাব আর ভোট দেব, আমাদের পছন্দ মতো।' স্বভিমান অঞ্চল। ছবি সৌজন্য এইচটি / বিশ্বরঞ্জন রাউত।
2/5সামনেই ফেব্রুয়ারিতে ভোট। এমনই এক ফেব্রুয়ারি মাসে ২০১১ সালে এই এলাকা থেকে মালকানগিরিরি জেলা কালেক্টর আর ভমিনিল কৃষ্ণা ও এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। আটকে রাখা হয় দিন। এলাকার মাও নেত্রী তথা মাওবাদী সিপিআইএর সেন্ট্রাল কমিটির নেতা রামকৃষ্ণর স্ত্রী গন্তি প্রসাদনকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ওই দুই প্রশাসনিক কর্তাকে ছাড়ে মাওবাদীরা। এরপর ২০১২ সালে এই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভয়াবহ আইইডি বিস্ফোরণ হয়। যশোদা আলাংএর মতো বহু মানুষ সেই রক্তাক্ত অস্থির পরিস্থিতির সাক্ষী ছিলেন। যোশাদ বলছেন, ‘মাওবাদীরা এলাকায় ৪০ বছ শাসন করেছে। একবার তারা বয়কটের ডাক দিলে কারোর সাধ্য ছিল না তা অমান্য করার। তবে এবার আমরা যাব আর ভোট দেব, আমাদের পছন্দ মতো।’ স্বভিমান অঞ্চল। ছবি সৌজন্য এইচটি / বিশ্বরঞ্জন রাউত।
স্বভিমান অঞ্চলের ৩৭২ স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ১৭২ টি গ্রাম। ওড়িশার মূল ভূখণ্ডের থেকে এটি বালিমেলা রিজার্ভার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এরপর এলাকায় তৈরি হয়েছে রাস্তা। মিটেছে দূরত্ব। যে জোদাম্বো গ্রাম পঞ্চায়েতকে এককালে অন্ধ্র-ওড়িশার মাওবাদীদের দুর্গ মনে করা হত, তা এখন উন্নয়নের আরেক নাম।(স্বভিমান অঞ্চল,   ছবি সৌজন্য এইচটি / বিশ্বরঞ্জন রাউত।)
3/5স্বভিমান অঞ্চলের ৩৭২ স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ১৭২ টি গ্রাম। ওড়িশার মূল ভূখণ্ডের থেকে এটি বালিমেলা রিজার্ভার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এরপর এলাকায় তৈরি হয়েছে রাস্তা। মিটেছে দূরত্ব। যে জোদাম্বো গ্রাম পঞ্চায়েতকে এককালে অন্ধ্র-ওড়িশার মাওবাদীদের দুর্গ মনে করা হত, তা এখন উন্নয়নের আরেক নাম।(স্বভিমান অঞ্চল,   ছবি সৌজন্য এইচটি / বিশ্বরঞ্জন রাউত।)
মূলত, ওড়িশার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেই এই এলাকাকে কবজা করতে থাকে মাওবাদীরা। ৩১ হাজার মানুষকে ওড়িশার মূল এলাকা থেকে আলাদা করে রাখা তারা। ১৯৭৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের নক্সাল আন্দোলনের তাপ এই অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। নদী বাঁধ রিজার্ভার দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই জঙ্গলাকীর্ণ এলাকাকে ধীরে ধীরে ডেরা বানাতে থাকে মাওবাদীরা। চলতে শুরু করে বিভিন্ন মাওবাদী কার্যকলাপ। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০০৮ সালে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয় এলাকায়। ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৪২ টি মাওবাদী হিংসার ঘটনা ঘটে। ১০১ জন নাগরিক ও ৭৭ জন নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এতটাই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে, যে এলাকায় স্বাস্থ্য কর্মীরা পর্যন্ত প্রবেশ করতে ভয় পেতেন। রুখে যেতে শুরু করে উন্নয়নের কাজ। ছিলনা কোনও স্কুল। ছিল মাটির রাস্তা। (  প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি হিন্দুস্তান টাইমস) (HT_PRINT)
4/5মূলত, ওড়িশার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেই এই এলাকাকে কবজা করতে থাকে মাওবাদীরা। ৩১ হাজার মানুষকে ওড়িশার মূল এলাকা থেকে আলাদা করে রাখা তারা। ১৯৭৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের নক্সাল আন্দোলনের তাপ এই অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। নদী বাঁধ রিজার্ভার দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই জঙ্গলাকীর্ণ এলাকাকে ধীরে ধীরে ডেরা বানাতে থাকে মাওবাদীরা। চলতে শুরু করে বিভিন্ন মাওবাদী কার্যকলাপ। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০০৮ সালে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয় এলাকায়। ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৪২ টি মাওবাদী হিংসার ঘটনা ঘটে। ১০১ জন নাগরিক ও ৭৭ জন নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এতটাই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে, যে এলাকায় স্বাস্থ্য কর্মীরা পর্যন্ত প্রবেশ করতে ভয় পেতেন। রুখে যেতে শুরু করে উন্নয়নের কাজ। ছিলনা কোনও স্কুল। ছিল মাটির রাস্তা। (  প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি হিন্দুস্তান টাইমস) (HT_PRINT)
১৯৮৬ সাল থেকে এলাকার গুরুপ্রিয়া নদীর উপর বাঁধের কাজে হাত দিয়েছিল সরকার। তবে মাওবাদী কার্যকলাপে তা সম্পূর্ণতার রূপ পায়নি। ব্রিজ নির্মাণের কাজে টেন্ডার ডাকলেও যাঁরাই সাড়া দিতেন, তাঁদের হুমকি দিয়ে রাখত মাওবাদীরা। শেষে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ৯১০ মিটারের দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ করে সরকার। ব্রিজ নির্মাণ হতেই এলাকায় আসে মোবাইল সংযোগ। সরকারের কাছে এরপর বড় চ্যালেঞ্জ হয় গ্রামের একেবারে প্রান্তিক দিকের রাস্তা নির্মাণ। রাস্তা নির্মাণ শুরু হলেই হুমকি আসত মাওবাদীদের। নির্মাণ কর্মীদের ঘেরাও করত গ্রামবাসীরা। তারমাঝে উন্নয়নের কাজে বিঘ্ন হয়ে দাঁড়ায় কোভিড। কিন্তু ফোকাস সরায়নি প্রশাসন। শেষে স্বভিমান অঞ্চলের ৩৯১.৩২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৮৮.৮৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে ফেলা যায়। রাজ্য সরকারের সোশিও ইকোনমিক আপলিফ্টমেন্ট প্রকল্পের হাত ধরে এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ, বিদ্যুৎ, স্কুল স্থাপনের পথে হাঁটতে শুরু করে প্রশাসন। তবে, এলাকাবাসীর মন মাওবাদীদের বিপক্ষে যায়, ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারির পর থেকে। যখন গ্রামে রাস্তা নির্মাণ রুখতে দুজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল মাওবাদীরা। সেই দুই মাওবাদীর বিরুদ্ধে কার্যত গোটা গ্রামের মহিলারা প্রতিবাদে সরব হন। দুপক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের খবর আসে। এরপর এলাকায় আর প্রশ্রয় পায়নি মাওবাদীরা। সরকার এগিয়ে যায় নিজের উন্নয়নের লক্ষ্যে।  স্বভিমান অঞ্চল, ছবি সৌজন্য এইচটি/বিশ্বরঞ্জন রাউত।
5/5১৯৮৬ সাল থেকে এলাকার গুরুপ্রিয়া নদীর উপর বাঁধের কাজে হাত দিয়েছিল সরকার। তবে মাওবাদী কার্যকলাপে তা সম্পূর্ণতার রূপ পায়নি। ব্রিজ নির্মাণের কাজে টেন্ডার ডাকলেও যাঁরাই সাড়া দিতেন, তাঁদের হুমকি দিয়ে রাখত মাওবাদীরা। শেষে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ৯১০ মিটারের দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ করে সরকার। ব্রিজ নির্মাণ হতেই এলাকায় আসে মোবাইল সংযোগ। সরকারের কাছে এরপর বড় চ্যালেঞ্জ হয় গ্রামের একেবারে প্রান্তিক দিকের রাস্তা নির্মাণ। রাস্তা নির্মাণ শুরু হলেই হুমকি আসত মাওবাদীদের। নির্মাণ কর্মীদের ঘেরাও করত গ্রামবাসীরা। তারমাঝে উন্নয়নের কাজে বিঘ্ন হয়ে দাঁড়ায় কোভিড। কিন্তু ফোকাস সরায়নি প্রশাসন। শেষে স্বভিমান অঞ্চলের ৩৯১.৩২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৮৮.৮৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে ফেলা যায়। রাজ্য সরকারের সোশিও ইকোনমিক আপলিফ্টমেন্ট প্রকল্পের হাত ধরে এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ, বিদ্যুৎ, স্কুল স্থাপনের পথে হাঁটতে শুরু করে প্রশাসন। তবে, এলাকাবাসীর মন মাওবাদীদের বিপক্ষে যায়, ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারির পর থেকে। যখন গ্রামে রাস্তা নির্মাণ রুখতে দুজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল মাওবাদীরা। সেই দুই মাওবাদীর বিরুদ্ধে কার্যত গোটা গ্রামের মহিলারা প্রতিবাদে সরব হন। দুপক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের খবর আসে। এরপর এলাকায় আর প্রশ্রয় পায়নি মাওবাদীরা। সরকার এগিয়ে যায় নিজের উন্নয়নের লক্ষ্যে।  স্বভিমান অঞ্চল, ছবি সৌজন্য এইচটি/বিশ্বরঞ্জন রাউত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.