প্রায়ই বেরোন সাইকেল নিয়ে। রবিবারও সাতসকালে তেমনই বেরিয়েছিলেন। রাস্তাতেই দেখা উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানীর সঙ্গে। কোচবিহারের ফাঁকা রাস্তায় তিনিও স্কুটার নিয়ে শখের ছবি তুলতে বেরিয়েছিলেন। তাঁর কাছেই শুনলেন, কাছেই রাস্তার ধারে কয়েকটি গাছে বাচ্চাসমেত বাসা বেঁধে রয়েছে কয়েকটি শামুকখোল পাখি। কিন্তু ওখানে রাস্তা সারাইয়ের কাজে পিচ গলানোর মেশিনের আগুন ও ধোঁয়ায় পাখির ছানাগুলো বিপদে পড়তে পারে। শোনামাত্র পরিচিত ওই বিজ্ঞানী ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আইটিআই মোড়ে ছুটলেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।
এলাকায় গিয়ে ওঁরা দেখেন, একটি গাছের নীচে পিচ গলানোর মেশিন রেখে রাস্তা সারাইয়ের কাজ চলছে। মেশিন থেকে দাউ দাউ করে আগুন ও গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে। গাছটির একেবারে উপরের কয়েকটি শাখায় পাখির বাসা। স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলেন, ওগুলো শামুকখোল পাখি, সঙ্গে কয়েকটি বাসায় ছানাও আছে। ওখানে দাঁড়িয়েই পিচ গলানোর মেশিন গাছের নীচ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। তাঁর কথায়, “বিষয়টি জানার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছিলাম। গাছের নীচ থেকে মেশিন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন সকালে প্রথমে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধিকর্তা অশোক চৌধুরীর নজরে পড়ে বিষয়টি। তিনিই পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান। অশোক বলেন, “আমি প্রথমে কর্মরত শ্রমিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করি। কিন্তু তাঁরা আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ করছিলেন না। বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন।” কেন গাছের নীচেই পিচ গলানোর মেশিন রেখে কাজ হবে? পূর্ত দফতরের কোচবিহার জেলার নির্বাহী বাস্তুকার মৃন্ময় দেবনাথ বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’
শহরের পরিবেশপ্রেমীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকার বড় গাছগুলিতে প্রচুর শামুকখোল পাখি রয়েছে। পাশেই বন দফতরের অফিস। তবু কেন তাদের বিষয়টি নজরে পড়েনি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বন দফতরের এক আধিকারিক অবশ্যজানান, তাঁদের নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হত। পরিবেশকর্মী অরূপ গুহ বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ দেব। কিন্তু সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’