Sunil Chhetri, IND vs PAK: স্টিমাচের লাল কার্ডের পরেও সুনীলের হ্যাটট্রিক, ৪-০ গোলে পাক বাঙ্কার উড়িয়ে দিল ভারত

ধারে ও ভারে ভারত (India) এগিয়েই ছিল। বুধবার অর্থাৎ ২১ জুন বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) কান্তিরাম্ভা স্টেডিয়ামে (Kanteerava Stadium) ৯০ মিনিটের যুদ্ধে নামার আগে ফেভারিট ছিল সদ্য ইন্টারকন্টিনেন্টল জয়ী (Intercontinental Cup)। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (SAFF Championship 2023) নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে (Pakistan) ৪-০ গোলে হেলায় হারাল ভারতীয় দল। হ্যাটট্রিক করে ‘মেন ব্লু ব্রিগেড’-এর কাছে সেই ত্রাতা হিসেবে ধরা দিলেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক’ সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। একটি গোল করেন ‘সুপার সাব’ উদান্তা সিং (Udanta Singh) । তবে জিতলেও অহেতুক মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড হজম করলেন ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। বৃষ্টিস্নাত কান্তিরাম্ভায় এই জয়ের পরেও ইগরের লাল কার্ড দেখা প্রীতম কোটাল (Prtitam Kotal)-অমরিন্দর সিংদের (Amrinder Singh) কাঁটার মতো বিঁধছে। 

খেলার ১০ মিনিটে প্রথম ভুল করেন পাক গোলকিপার সাকিব হানিফ। হানিফের কাছে এটি একটি নিয়মিত ব্যাক পাস ছিল, সুনীলকে চাপ দেওয়ার জন্য তাঁর দিকে ছুটে আসেন। তবে লাভ হয়নি। বলকে অনায়াসে জালে জড়িয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সুনীল। ১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ম্যাচে দ্বিতীয় গোল করলেন সুনীল। সেটা ভারতীয় জার্সিতে ৮৯তম গোলটি করলেন অধিনায়ক। 

আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলদাতাদের তালিকায় চার নম্বরে উঠে এলেন সুনীল। লিওনেল মেসির ঠিক পরেই রয়েছেন তিনি। বুধবার হ্যাটট্রিকের পর সুনীলের ৯০টি গোল হয়ে গেল। তাঁর সামনে যে তিন জন রয়েছেন প্রত্যেকেরই একশোটির বেশি গোল রয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল রয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। তিনি ২০০টি ম্যাচে ১২৩টি গোল করেছেন। এর পর ইরানের আলি দায়ি ১৪৮টি ম্যাচে ১০৯টি গোল করেছেন। তিনে মেসি। ১৭৫ ম্যাচে তাঁর গোল ১০৩। চারে সুনীল। তিনি ১৩৮তম ম্যাচে ৯০টি গোল করলেন। 

২০ মিনিটের আগেই দুই গোল পেয়ে তখন টগবগ করে ফুটছে ভারত। তবে প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের ফুটবলাররা ঝামেলায় জড়াতেই, নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ইগর। সাইড লাইনের দাঁড়িয়ে    থাকলেও, বল হাতে ধরে বিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। 

বাকিটা সময় গোল না হলেও, ভারত কিন্তু আগ্রাসী ফুটবল থেকে সরে আসেনি। আর তাই পাক ডিফেন্স ভেঙে ফের একবার পেনাল্টি আদায় করে ভারত। এবারও ভুল করলেন না সুনীল। ৭৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে প্রথম হ্যাটট্রিক করে নজির গড়লেন। 

ইগর লাল কার্ড দেখার জন্য সাইড লাইনের বাইরে থেকে দলকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন সহকারী কোচ মহেশ ঘাউলি। ৭৬ মিনিটে ছাংতে-কে তুলে মাঠে নামিয়ে দেন উদান্তা সিং-কে। সেই ছকে ফের এল সাফল্য। ‘সুপার সাব’ উদান্তা দুরন্ত গোলে দলের ব্যবধান  ৪-০ করে দিলেন। ফলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিপক্ষকে হেলায় হারিয়ে তিন পয়েন্ট ঘরে তুলে নিল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। 

বছরটা ছিল ২০০৫। জুন মাস। কোচ সুখবিন্দর সিংয়ের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় ফুটবল দল গিয়েছিল পাকিস্তানে। কিন্তু দলের সেরা তারকা সেই সফরে গরহাজির। তিনি বাইচুং ভুটিয়া। কোচ সুখবিন্দরের মাথায় তখন একটাই দুশ্চিন্তা, গোল করবে কে? এর দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব ২০ ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলেন সুনীল। জেসিটি-তে সুখবিন্দরের অধীনে খেলেওছিলেন তিনি। তাঁর ওপরই ভরসা রাখতে হয় সুখিকে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে সন্দেহ ছিল ভারতীয় কোচের মনে। বাকিটা ইতিহাস। ১২ জুন, কোয়েটার আয়ূব স্টেডিয়ামে সুনীল ছেত্রীকে নামিয়েই দেন সুখি। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে যা করলেন সুনীল, তার আশা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভাবতে পারেননি। প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে বল পেয়েই গোলকিপারের পাশ দিয়ে সোজা জালে জড়িয়ে দেন। পরমুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দল। 

জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করার পর দেশের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার সন্মান অর্জন করেছেন সুনীল, সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত আর একটিও গোল ছিল না তাঁর! অভিষেক সফরে তিনটি ম্যাচের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও তিনটি ম্যাচ খেলেছেন সুনীল। প্রথমটি, ২০০৮-এর ৫ জুন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যে ম্যাচে ভারত ২-১ ব্যবধানে  জিতলেও সুনীল কোনও গোল পাননি। দ্বিতীয়টি, ২০১১-র ২৩ মার্চ। এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাই পর্বে। সেই ম্যাচেও ভারত ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল। সেবারও সুনীল গোল করতে পারেননি। তৃতীয়টি, ২০১৩-র ১ সেপ্টেম্বর। ফের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সেই ম্যাচে ভারত ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল। তবে সুনীলের গোল ছাড়াই। আর তাই হয়তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে গত তিন ম্যাচে গোল করতে না পারার জ্বালা সুনীল হ্যাটট্রিক করে মিটিয়ে নিলেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.