লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় সুকান্ত মজুমদারের ঠাঁই পাওয়ার আঁচ মিলতেই স্পষ্ট হল সেই সম্ভাবনা— তিন বছরের মধ্যেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে রদবদল হতে চলেছে।
বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত কেন্দ্রে মন্ত্রী হলে বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁকে রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে জল্পনায় চলে এসেছে একাধিক নাম। তার মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে বিজেপির খারাপ ফলের মধ্যেও নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি আসনেই ‘পদ্ম’কে জয় এনে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাই অমিত শাহ-জেপি নড্ডারা তাঁকে বেছে নিতে পারেন বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
অন্য দিকে, এ বারের লোকসভা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে হেরে গেলেও দিলীপের নেতৃত্বেই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় সবচেয়ে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। ফলে তাঁর নামও বিজেপি হাইকমান্ড ‘বিবেচনা’ করতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া, পুরুলিয়ার দু’বারের সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং সদ্যপ্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে আলোচনা।
রাজ্য বিজেপির পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের অন্যতম জ্যোতির্ময় কুড়মি জনগোষ্ঠীর নেতা। তিনি নিজে জিতলেও এ বারের লোকসভা ভোটে রাঢ় বাংলায় বিজেপির কুড়মি ভোটব্যাঙ্কে কার্যত ধস নেমেছে। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের মতো আসনে হাতছাড়া হওয়া তার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এই পরিস্থিতিতে জ্যোতির্ময়ের উপর রাজ্য সংগঠনের দায়িত্ব দিয়ে কুড়মি সমাজকে ‘বার্তা’ দিতে পারে বিজেপি। অন্য দিকে, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হলেও লকেট রাজ্য বিজেপির অন্যতম ‘মহিলা মুখ’। শুভেন্দু শিবিরের সঙ্গেও তাঁর সমীকরণ মসৃণ।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ‘অভাবনীয়’ উত্থানের পর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পদ্মশিবির। শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের কাছে দুরমুশ হতে হয় বিজেপিকে। তিন অঙ্কেও পৌঁছতে পারেনি তাদের আসনসংখ্যা। ২০২১-এর ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশে সেই ‘ধাক্কা’র পরেই রদবদলের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য বিজেপিতে। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দিলীপের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন সুকান্ত।
সুকান্তের পাশাপাশি রাজ বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি পদেও রদবদল হতে পারে বলে ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের (রাজ্য বিজেপির সদর দফতর) একটি সূত্রের খবর। বর্তমান সভাপতি ইন্দ্রলীন খাঁকে সরিয়ে আনা হতে পারে বিষ্ণুপুরের তিন বারের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। এ ছাড়া শুভেন্দু রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পেলে বিজেপি পরিষদীয় দলেও রদবদল অবশ্যম্ভাবী। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী বিরোধী দলনেতার দৌড়ে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এগিয়ে রয়েছেন বলে ওই সূত্রের খবর। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বর্তমানে বিজেপি পরিষদীয় দলের চিফ হুইপ। তিনি এ বার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। ফলে বিধায়ক পদ ছাড়তে হবে টিগ্গাকে। এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী চিফ হুইপ হওয়ার দৌড়ে আসানসোলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নাম রয়েছে আলোচনায়।
তবে দলের অন্য একটি সূত্র বলছে, শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করা হলে দিলীপকে বিরোধী দলনেতা করার বিকল্প ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হবে তাঁকে। কারণ, তৃণমূলের জুন মালিয়া মেদিনীপুর লোকসভা থেকে জেতায় বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে হবে তাঁকে। কিন্তু দিলীপ লোকসভা ভোটের পরেই যে ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তাতে তাঁকে বিরোধী দলনেতা করা হতে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া, গত কয়েক বছর এ রাজ্যে উপনির্বাচনে একতরফা জয় পেয়েছে শাসকদল। তাই দিলীপ নিজে মেদিনীপুরের উপনির্বাচনে দাঁড়াতে রাজি হবেন কি না, বা দাঁড়ালেও জিততে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের অন্দরে।